পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা মনোমোহনের পূর্বপুরুষ বলিল, “কে তোমার বন্ধু ? তাই পীতাম্বরের আজ এই অবস্থা। তবে ভগবান আছেন, বন্ধুকে ঠকাইয়া মনোমোহনের পূর্বপুরুষ যা পাইয়াছিল, আজ তার সিকির সিকিও নাই। মনোমোহনের বাপিও কি সেদিন অপঘাতে মরে “নাই, সহরের রাস্তায় গাড়ী চাপ পড়িয়া ‘মরে নাই ? পাপের পুরস্কার হাতে হাতে কিন্তু শেষ পৰ্য্যন্ত ধৰ্ম্মের জয় তো ঘটিবেই । পাপের শান্তি যাইবে কোথায় ? ‘এই যে কলকাতা যাচ্ছে মনোমোহন, ওকে নেওয়াচ্ছে কে ? তোমাদের বলে রাখছি শোন, সর্বস্ব খুইয়ে পথের ভিখিরি হয়েও যদি না ফিরে আসে দু’দিন পরে ভগবান মিথ্যা, ধৰ্ম্ম মিথ্যা । ছেলেমেয়ে যে হয়নি। ওর, সে কার বিধান ? প্ৰায়শ্চিত্ত ভগবান আর টানবেন না ঠিক করেছেন, ক’পুরুষ ধরে পাপের ধন ক্ষয় করিয়েছেন, ওর ব্যাপটকে অপঘাতে মেরেছেন, ওকে এবার সর্বস্বাস্ত করে প্ৰায়শ্চিত্ত সম্পূর্ণ করাবেন, বংশটাও লোপ করে দেবেন।” পীতাম্বরের গায়ের চামড়া ধবধবে সাদা, প্রথম বয়সে তামাটে ছিল। মাথার চুল, ভুরু, গোঁফ, দাড়ি আর গায়ের লোমগুলি পৰ্য্যন্ত সাদা হইয়া গিয়াছে। কথাগুলি বলিবার সময় আনমনে পৈতাটি সে আঙলে জড়াইতেছিল, তার কথাগুলি তাই পৈতা হাতে করিয়া অভিশাপ দেওয়ার মত শোনাইল । পথের ভিখারী হইয়া একেবারে বংশলোপের অভিশাপ ! বছর পাচেক মোটে বিবাহ হইয়াছে মনোমোহনের, ছেলেমেয়ে হওয়ার সময় যায় নাই। এ স্ত্রীর সন্তান না হইলে আরেকটা বিবাহ করিতেই বা তার বাধা কিসের ? পীতাম্বরের বাড়াবাড়িটা অনেকের পছন্দ হইল না। পূৰ্বপুরুষের গল্প বলিতে চাও বলে। কিন্তু কবে কোন যুগে কি ঘটিয়াছিল, সত্যসত্যই ঘটিয়াছিল। কিনা ঠিক নাই, সে প্রসঙ্গ তুলিয়া আজ এভাবে মানুষকে শাপ দেওয়া কেন ? কেহ আপত্তি করিলে পীতাম্বর বলে ‘পাগল। আমি কেন শাপ দিতে যাব ? আমি বলছি ভগবানের বিচারের কথা ।” পীতাম্বরের এতখানি গায়ের জালার কারণটাও অনেকে বুঝিয়া পারিতেছিল না । পীতাম্বর নিজেই বুঝাইয়া দেয়। “মতিগতি ভাল হলে বংশটা হয়তো বজায় থাকতো। কিন্তু ছোড়াটা বড় r २३१ (t);