পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী পাষণ্ড । ওর বাপ অপঘাতে মরেছে, কিন্তু মানুষটা মন্দ ছিল না। মাসকাবারে যখনি গিয়ে দাঁড়িয়েছি, সঙ্গে সঙ্গে সাতটি টাকা হাতে তুলে দিয়েছে, হাসিমুখে বলেছে, ধরতে গেলে সব কিছু তো আপনারই ঘটক মশায়, সাতটি করে টাকা আপনার হাতে দিতে লজ্জা হয়-কিন্তু করব কি বলুন, সে অবস্থা তো আর নেই। বাপ মরার পর বছর ঘোরে নি, এ ছোড়া কিনা। ওমাসে আমায় খালি হাতে ফিরিয়ে দিলে, স্পষ্ট বলে দিলে এখন থেকে আর একটি পয়সা দিতে পারবে না। ’ সকলে মনে মনে বলে, এইজন্য তোমার এত রাগ ! 'না দিলি, না দিবি টাকা, আমি কি চেয়েছি তোর কাছে ? তোর বাপ ভক্তি করে দিত, তাই না তোর কাছে এসে দাড়িয়েছি ? মুখের ওপর কি কথা বললে শোনো। বললে, আপনার হিসেব তো বাবা চুকিয়ে দিয়ে গেছেন। ঘটক মশায়। আমি তো শুনে অবাক । বললাম, ‘কিসের হিসেব বাবা ? তোমার বাবা স্নেহভক্তি করে দিতেন, হিসেব তো কিছু ছিল না।” কথা বলিতে বলিতে পীতাম্বর এমন জায়গায় থামিয়া যায় যে শ্রোতাদের প্রায় ধৈৰ্য্যচ্যুতি ঘটিবার উপক্রম হয়। একজন প্রশ্ন করে ‘তারপর কি হল। পীতাম্বর বলে, “আমার কথা শুনে ছোড়া যেন খিচিয়ে উঠল, আপনার বাপ-দাদার সম্পত্তি ভোগ করার পাপ যেন না লাগে, সেই বাবদে আপনার সাতটাকা করে বরাদ্দ ছিল তো ? তা সেই পাপেই যখন বাবাকে অপঘাতে মেরেছেন, আর তো আপনার পাওনা নেই।' ' পৈতাটা আঙলে জড়াইতে জড়াইতে পীতাম্বর বলে, “শুনলে কথা ? আমি যেন ওর বােপকে অপঘাতে মেরেছি! আরে, তোর পূর্বপুরুষ করল পাপ, ভগবান তোর ব্যাপকে দিলেন শাস্তি, তার মধ্যে আমাকে তুই জড়াস। কেন ! ভগবানের বিধান উন্টে দেবার ক্ষমতা থাকলে তোর ব্যাপকে কি আমি বঁচিয়ে রাখতাম না, অমন ভালমানুষ ছিল তোর বাপ ? একজন শ্রোতা বলিল, “তোর বাপ অপঘাতে মরেছে, একথাটা বলে বেড়ান। আপনার উচিত হয় নি। মাসে মাসে তাহলে সাহায্যটা পেতেন।” পীতাম্বর চটিয়া বলিল, “সাহায্য ? কিসের সাহায্য ? আমি কি ভিখিরি যে ওর কাছে সাহায্য চাইতে যাবাে ? ভিখির হবে ও-দেখে নিও, ভিখিরি হয়ে ও ফিরে or Rጳbም