পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা সব আছে, কাব্যের নায়িকার মত ভালবাসার খেলা জানে, অথচ এমন সরলা যে কঁাটা গাছে অচল আটকে গেল-” “তুমি থামবে ? সে চিঠির জবাব মোহন দেয় নাই, চিন্ময়ের বিবাহেও আসে নাই। চিন্ময় অনেক অনুযোগ দিয়া আরেকখানা চিঠি লিখিয়াছিল এবং স্পষ্ট উল্লেখ করিযাছিল, সন্ধ্যার সঙ্গে কয়েকদিন কোন গ্রামে গিয়া বেড়াইয়া আসিবাব কথা ভাবিতেছে। চিঠির জবাব লিখিয়াও চিঠিখানা পোস্ট করিতে মোহন ভুলিয়া গিয়াছিল । তারপর এ পৰ্য্যন্ত দু’জনেই ছিল চুপচাপ। খবরাখবরের আদানপ্ৰদান হইল প্ৰায় আধা ঘণ্টা, তারপর হঠাৎ মোহন বলিল, ‘আসল কথাই এতক্ষণ জিজ্ঞাসা করিনি। সত্যি আমি গেয়ে । একজনের সঙ্গে জীবন কাটাতে কেমন লাগছে ?” 'डांलछे।' আসল কথাটা জিজ্ঞাসা করিতে মোহন ভুলিয়া যায় নাই, চিন্ময় আপনা। হইতে বলে কিনা দেখিবার জন্য অপেক্ষা করিতেছিল। চিন্ময়ও বন্ধুর প্রশ্নের অপেক্ষায় থাকায় আধা ঘণ্টার আলাপে সন্ধ্যার কথা একেবারেই বাদ পড়িয়াছে। এইবার বিবাহোৎসবে না। আসার এবং চিঠির জবাব না দেওয়ার একটা কৈফিয়ৎ খাড়া করা মোহনের উচিত ছিল । কৰ্ত্তব্যটা সে সম্পূর্ণ এড়াইয়া গেল। চিঠির ইঙ্গিত ছিল খুব স্পষ্ট। মনোমোহন নিমন্ত্ৰণ করিলেই চিন্ময় ও সন্ধ্যা কয়েকদিনের জন্য তার গ্রামের বাড়ীতে বেড়াইয়া আসিত । মোহন জবাব লিখিয়াও চিঠি ডাকে দেয় নাই । তার মনে হইয়াছিল, এ চিঠি সন্ধ্যার ফরমাসে লেখা, গ্ৰাম্য আবেষ্টনীতে তাকে দেখিবার সখ হইয়াছে সন্ধ্যার। সন্ধ্যার কল্পনায় হয়তো সে ফতুয়া গায়ে দেয়, উবু হইয়া বসিয়া পাড়ার দশজনের সঙ্গে খোশ গল্প করে আর তার বাড়ীর শাখা সিন্দুর পরা ঘোমটা-টানা মেয়ের কলসী কঁাখে পুকুরে জল আনিতে যায়। এসব নিজের চোখে দেখিয়া সন্ধ্যার একটু আমোদ পাওয়ার ইচ্ছা হইয়াছে। RV6