পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা মোহন বসে । পাচ ছ’বছর আগে ঘরখানা অন্যরকম ছিল। আলতা সিন্দুর গয়না। আর রঙীন শাড়িতে জমকালো বৌয়ের বিধবা বেশ ধরার মত ঘরের চেহারার পরিবর্তন হইয়াছে। পুরু নরম ফরাসে তাকিয়া হেলান দিয়া বসিবার ব্যবস্থা ছিল আর ছিল বেতের মোড়া ও কাঠের পিাড়ি। গড়গড়া ও রূপাবধানো হুক ছিল, পানের বাট ও মসলার পাত্র ছিল, মাটির কুঁজে, পাথরের গ্লাস, তালপাতার পাখা ছিল। দেওয়াল ভরিয়া সাজানাে ছিল পটের ছবি ও গ্রাম্য নক্সা। শূন্য ঘরের চারিদিকে চোখ বুলাইতে বুলাইতে মোহন কেবল একটি কথায় প্রশ্ন করে, “কেন ?” চিন্ময় বলে, “কি করব ? গ্রামের গোরস্থ ঘরে যা কিছু থাকে সব এনেছি, কমদামী সব জিনিস কিনেছি, কিন্তু ঘরোয়া ভাবটা কিছুতে আনতে পারিনি। কখনো মনে হয়েছে ঘরে জঞ্জাল জমেছে, কখনো মনে হয়েছে নতুন একটা সহরে ফ্যাসান সৃষ্টি করেছি, কখনো মনে হয়েছে এবার বুঝি ক্যামেরা এনে শুটিং শুরু হবে। কোথায় যেন একটা ফাকি ছিল ধরতে পারিনি। সব তাই ছোটে ফেলেছি। ফাকি বজায় রেখে চলার চেয়ে এই রকম ফাকাই ভাল। মাঝে মাঝে এসে বসলে মনটা বেশ শান্ত হয়।” মোহন জিজ্ঞাসা করে, “সেই যে তুমি আমাদের বাড়ী গিয়ে ক’দিন ছিলে, তারপর আর গ্রামে গিয়ে থেকেছ কখনো ?” চিন্ময় বলে, “থাকিনি, তবে মাঝে মাঝে সকালে গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে গিয়ে সারাদিন কাটিয়ে এসেছি। গত রবিবারের আগের রবিবার মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। নরেশকে মনে পড়ে ? তাদের দেশের বাড়ীতে। তাদের বাড়ীতে অবশ্য বেশীক্ষণ থাকিনি, পুকুর পাড়েই সময় কেটেছিল। মন্ত একটা মাছ ধরেছিলাম। তুলতে কি পারি, অনেকক্ষণ খেলিয়ে তবে তুললাম।” 'कड दg शांछ ?' ‘সের দুই হবে।” দু’সেরি একটা মাছ মস্ত বড় মাছ চিন্ময়ের কাছে! তাদের মন্ত পুকুরটা এখন জেলেদের কাছে জমা দেওয়া হয়, আজ কাল দু'সেরি মাছ তার কাছেও অবশ্য তুচ্ছ নয়। কিন্তু ওই পুকুর হইতে ছিপে সে কতবার সাত আট সেরা ওজনের রুই,কাতলা ধরিয়াছো-খুব বেশীদিনের কথা নয়। ❖ ዓYo Sv(t)