পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা “এমন লজ্জা পেলাম ভাই! আমার মনে কিছু নেই, অবাক হয়ে দেখছিলাম যে কায়দা জানলে কত সিম্পল ভাবে রূপকে কি আশ্চৰ্য্যরকম ফুটিয়ে তোলা যায়। গেয়ে মানুষ, খেয়াল ছিল না। ওভাবে তাকাতে নেই।” ‘তাকালে দোষটা কি ? এ হল ঝরণার ন্যাকামি। সবাই দেখবে বলেই তো সাজগোজ করেছে! সোজাসুজি খোলাখুলি স্পষ্টভাবে চেয়ে দেখলেই বুঝি দোষ হয়ে গেল ?” একটু থামিয়া চিন্ময় নালিশের সুরে আবার বলে, “তোমার কাছে গ্রামের সব কিছুই খারাপ ! কেউ অসভ্যতা করলে মেয়েরা সোজাসুজি গালাগালি দেবেসেটাই তো উচিত। কিন্তু ওরকম কি সত্যি ঘটে ? আমি তো দেখেছি। একঘাটে মেয়েপুরুষ কয়েক হাত তফাতে নাইছে—পুরুষেরা আগাগোড়া মেয়েদের দিকে পিছন ফিরে থাকে, তাও দেখেছি।” মোহন বলে, “তা না হলে কি চলে ? সবাইকে পুকুরেই তো যেতে হবে। কাজেই ওরকম নিয়মনীতি দরকার। মেয়েরা নাইছে বলে তুমি একঘণ্টা হত্যা দিয়ে দাড়িয়ে থাকবে নাকি ? ওদের দিকে পিছন ফিরে একটু তফাতে তোমার নাওয়ার কাজ সেরে তুমি চলে যাও !” চিন্ময় খুশী হইয়া বলে, “তবে ? দ্যাখে তো কি সহজ সুন্দর নিয়ম।” পরদিন চিন্ময় একটি বাড়ীর খবর দিল । জগদানন্দ নামে এক ধনী আছে, তার গোটাকিয়েক বাড়ী আছে কলিকাতায় । চিন্ময়ের বাড়ী সহরের যে অঞ্চলে সেই অঞ্চলে তার একটি বাড়ী খালি আছে। একটু ঘুরিয়া যাইতে না হইলে চিন্ময়ের বাড়ী হইতে এ বাড়ীতে হাঁটিয়া আসিতে মিনিট পাচেকের বেশী সময় লাগিত না । বাড়ী দেখিয়া মোহনের খুব পছন্দ হইয়া গেল। আধুনিক ধাচের নতুন বাড়ী, জ্যামিতিক গঠন-বৈচিত্র্যে একটু ধাধার মত। ভাড়ার অঙ্কটা শুনিয়া সে ভড়কাইয়া গেল না । এ এলাকায় এরকম একটা বাড়ীর ভাড়া যে বেশী দিতে হইবে এটা তার জানাই ছিল । পরদিন মোহন বাড়ী ফিরিয়া গেল। বাড়ীওলার সঙ্গে কথা বলিয়াছে চিন্ময়, বাড়ীটা ভাড়া করার ব্যবস্থাও সেই করিবে । TRADA