পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা লাবণ্য বলে, “পড়েছি। শেষ বয়সের লেখা বোঝা যায়।” অন্য সব দিকে লাবণ্য তাকে হতাশ করিয়াছে। তার খানিকটা ছেলেমানুষী উচ্ছাস, কারণে অকারণে হাসি-কান্নার মধ্যে যার প্রকাশ, বাকীটা পরের মুখ চাওয়া পরাধীনতায় সন্তুষ্ট আড়াল-খোজা নিস্ক্রিয় জড়তা । সময় সময় মনে হয়, ভয় ও সঙ্কোচে সে আচ্ছন্ন হইয়া আছে শ্যাওলা আর পানভিরা পুকুরের মত, মাঝে মাঝে ছেলেমানুষীর বুদবুদ উঠে, ছোটবড় মাছের যত ভাঙ্গা ভাঙ্গা আত্মচেতনা লেজের ঝাপটায় একটু সময়ের জন্য পান সরাইয়া দেয়। এত বই পড়া, ইংরাজী সাহিত্য ঘাটাঘাটি করা তার মনের গড়ন, স্বভাব। আর চালচলনে কোন পরিবতনই যেন আনিতে পারে না । ওইটুকু ভরসাই মোহনের আছে। পড়াশোনার প্রভাব চেতনায় পড়িবেই।-- শুধু পরিবেশের জন্য লাবণ্যের চেতনায় সে প্রভাবটা চাপা পড়িয়া যাইতেছে। পরিবেশ বদল হইলে সেটা নিশ্চয় আত্মপ্ৰকাশ করিবে । রওনা হওয়ার কয়েকদিন আগেও মোহন তাই ভাবে, সকলকে দেশের এই বাড়ীতে রাখিয়া শুধু লাবণ্যকে নিয়া গেলেই ভাল হইত। আত্মীয়-পরিজন আর কেউ অবশ্য যাইবে না, শুধু তার মা আর ভাইবোন। ওদেরও রাখিয়া যাওয়াই হয়তো উচিত ছিল। কেবল সে আর লাবণ্য, আর কেউ নয়। এক থাকিলে নিজেকে হয়তো লাবণ্য খুজিয়া পাইত। কে কি মনে করিবে সর্বদা ভাবিতে না হওয়ায় সে নিজের কথা ভাবিবার অবসর পাইত । কিন্তু তার নিজের বড় মন কেমন করিরে মা আর ভাইবোনদের জন্য । ওদের রাখিয়া বোঁ নিয়া কলিকাতায় বাস করিলে লোকে নিন্দাও করবে। গ্রামের দু’জন মানুষ মরিয়ার মত মনোমোহনকে ধরিয়া বসিল যে, তারাও তার সঙ্গে কলিকাতায় যাইবে । পীতাম্বর এবং শ্ৰীপতি কামার। সারাদিন শ্ৰীপতি হাপর চালায়, দা কুড়াল কাস্তে শাবল লাঙ্গলের ফল। এই সব টুকটাকি লোহার জিনিস গড়ে, কোন রকমে তার দিন চলিয়া যায়। খুব কষ্টেই চলে, তবু সে বেকার নয়। তাই মোহন আশ্চৰ্য্য হইয়া বলে, “তুই কলকাতা গিয়ে করবি কি ?” ՀԵՏ)