পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী “আজ্ঞে, পয়সা কামাব। এমন করে কদিন চলে ? খেটে খেটে দেহ ক্ষয়ে গেল, দু’টো পয়সা জোটে না। লোহার দাম চড়ে, দা-কুড়ালের দাম চড়ালে কেউ কিনবে না । বাপিটার মরণ ছিল না, ব্যবসা শিখিয়ে গেছে।” শ্ৰীপতির বাপ অনেককাল মরিয়া গিয়াছে। “পয়সা কামাবি কি করে ? ‘কারখানায় খািটব। হেথায় হাতুড়ি পিট, সেথায় পিটাৰ। মজুরি তো মিলবে । দ’ গড়ে ঘরে ঘরে সাধতে হবে না, হাটে গিয়ে হা-পিত্যেস বাবে খন্দেরের পথ চেয়ে থাকতে হবে না ! আমাকে নেন। কত সাথে ।” বলিতে বলিতে সটান উপুড় হইয়া মেঝেতে শুইয়া পড়িয়া দু'হাতে সে মোহনের পা জড়াইয়া ধরিল। ‘পা ছাড় শ্ৰীপতি। আচ্ছা ফ্যাসাদে ফেললি তো তুই আমাকে।” শ্ৰীপতি কিছুতে পা ছাড়িবে না । ‘ফেসাদ করব না। কর্তা । দায় ঘাড়ে চাপাব তেমন মানুষ নই। কিছু না করতে পারি, ফিরে আসব।' অগত্যা মোহনকে রাজী হইতে হইল । পীতাম্বর আসিল একদিন একটু বেশী রাত্রে-চুপি চুপি চোরের মত আসিল । গ্রামের পথে তখন লোক চলাচল বন্ধ হইয়া গিয়াছে। কর্মচারী দু’জনকে ছুটি দিয়া মোহন বাহিরের ঘরে হিসাবপত্র দেখিতেছিল, চোখ তুলিয়া দ্যাখে নিঃশব্দে ছায়ার মত কখন পীতাম্বর আসিয়া দাড়াইয়াছে । পীতাম্বর ভূমিকা করিলা অনেক। বলিল, “ওদের কথা শুনো না বাবা, আমি তোমার হিতৈষী। ওরা মিথ্যে করে রটায় আমি তোমার পূর্বপুরুষের নিন্দে করি। আমার দরকার কি নিন্দে করে ? তিনপুরুষ আগে কি ঘটেছে না ঘটেছে, সত্যি না মিথ্যে ঠিক নেই, তাই নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়? দশজনের কাছে আমি তোমার প্রশংসা করি, তোমার ভালই চাই বাবা । কেন ভাল চাইব না ? সংসারে কটা মানুষ মেলে তোমার মত ?-” তারপর বলিল, “একটা ভিক্ষে চাইতে এসেছি তোমার কাছে, মুখ ফুটে বলতে ভরসা পাচ্ছি না। বাবা।” বলুন না, আমার সাধ্য থাকলে করব।” ‘অ্যামায় তুমি সঙ্গে নিয়ে চল।” R r 8