পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী করিতে থাকে, মাথা গুলাইয়া যায়। এই অবস্থায় তার কথায় একটু তোতলামির ভাব দেখা দেয়, একটা শব্দ উচ্চারণ করিতে করিতে মুহুর্তের জন্য পরের শব্দটি বুঝি কোথায় হারাইয়া যায়, জিভ দিয়া হাতড়াইয়া খুজিয়া আনিতে হয় । মোটামুটিভাবে জিনিসপত্র একটু গুছাইয়া সকলের শোয়ার ব্যবস্থা করিয়া বেশী রাত্রে মােহন নিজে যখন শুইতে গেল, মৃন্ময়ের রক্তহীন ফ্যাকাসে মুখে যন্ত্রণার ছাপটা তখনো তার মনে আছে। পরিশ্রমে নয়, সহর যাত্রার উত্তেজনায় সকলে শ্ৰান্ত হইয়া अिजन्नाई, শোয়া মাত্র তারা ঘুমাইয়া পড়িয়াছে—মোহনের ঘুম আসিতে একটু দেৱী হয়। মৃন্ময়ের কথা ভাবিতে ভাবিতে সে। নগেনের কথা চিন্তা করে। হোষ্টেলে থাকিয়া নগেন মফঃস্বলের কলেজে পড়িতেছিল, দেশের বাড়ী হইতে তিন চার ঘণ্টার পথ। এবার তাকে কলিকাতার কলেজে ভক্তি না করিয়া যেখানে ছিল সেখানে রাখিলে কেমন হয় ? উঠতি বয়সে মফঃস্বলের সহরের অবাধ আলোবাতাস আর খোলা মাঠ ছেলেদের স্বাস্থ্য ভাল। রাখে, শান্ত আবেষ্টনী মনকে সুস্থ রাখে। কিন্তু কেউ বোধ হয় এ প্ৰস্তাবে রাজী হইবে না । নিজে সে পচা-ডোবা বনজঙ্গল কাদা আর মশাভিরা গ্রাম ত্যাগ করিয়া আসিয়াছে। এখানে বাড়ীতে থাকিয়া কলেজে পড়ার সুবিধা থাকিতে নগেনকে দূরে হােষ্টেলে গিয়া থাকিতে বলিবে কোন মুখে ? নগেনের ভালর জন্যই সে যে তাকে ওখানে রাখিয়া পড়াইতে চায়, তার এ যুক্তির মানেও কেহ বুঝিবে না। বিশেষতঃ মা । পরদিন সকালে মাঝবয়সী এক ভদ্রলোক আসিল। বলিল, “আমি আপনার বাড়ীওয়ালা । পরিচয় করতে এলাম।” মোহন একটু অভিভূত হইয়া বলিল, “আমুন ! বসুন।” কোথায় সে যেন এইরকম একটি মূৰ্তিমান আভিজাত্যের মত জমকালো চেহারার “মানুষ দেখিয়াছে। মনের মধ্যে গভীর ভয় ও শ্রদ্ধায় আজও 1. সেই মানুষটা জড়াইয়া আছে, তার স্মৃতিটা পরিণত হইয়া গিয়াছে 『 অনুভূতিতে । কে সে ? কবে কোথায় সে তাকে দেখিয়াছে ? Rad o