পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঁাশী এখনো বেজে চলেছে । উপরের খোলা ছাদ থেকে ভেসে আসছে লোকনাথের সন্ন্যাসী ভাই সোমনাথের গম্ভীর উঁচুগলার সাধন সঙ্গীত। ঝুমুরিয়ায় এখন গভীর রাত, ঘরে ঘরে সব ঘুমিয়ে আছে। এ বাড়ীতে অৰ্দ্ধেক মানুষ এখনো জেগে ।। ঘরে গিয়েছে, হয়তো শুয়েও পড়েছে, কিন্তু চোখে ঘুম নেই! )*/ ঘুমের কথা ভাবতে গিয়ে রাস্তার ধীরে ধীরে ঘুম পায়। গায়ের জালাও জড়িয়ে আসে। লোহার সিড়ি বেয়ে নীচে নেমে যাবে ভাবছে, কোণের অন্ধকার ঘরের দুয়ার খুলে বেরিয়ে আসে লোকনাথের বিধবা বোন কালীতারা । সেখানে খানিকটা স্থানে জ্যোৎসু পড়েনি । প্ৰতিফলিত স্তিমিত আলোয় একখানা সাদা ধবধবে থান কাপড় যেন ডাইনীর মায়ায় আপনা থেকে ভাজ হয়ে মানুষের রূপ নিয়ে রাস্তাকে আঁতকে দিতে চেয়েছে। ‘কে ওখানে ?” কালীতার কাছে এগিয়ে আসে ।

  • আমি রান্ত ।” “রম্ভ কে ? নতুন ঝি ? এখানে কি করছিস ?” “ঝি নাই। ঝুমুরিয়া থেকে এয়েছি। শশাঙ্ক বাবুর সাথে।” “তা বেশ করেছে । এখানে কি করছ শুনি এত রাতে ?” কি ঝােঝ কালীতারারার কথার । যেন কামড়ে দিতে চায়। “কি আর করব ? দাডিয়ে আছি।” ঝাঁঝালো গলায় ফোস করা জবাব দিয়ে ক্রুদ্ধ ও বিমর্ষ রম্ভ গট গট করে লোহার সিড়ির দিকে এগিয়ে গেল। দু’দিন আগে এই কালীতারাই তার সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বলেছিল । কি মিষ্টিই লেগেছিল কথাগুলি রম্ভার কাছে ! কি ভালোই লেগেছিল সেদিন মানুষটাকে ।

সিড়ির শেষে শুধু একজনের সঙ্গে রম্ভার দেখা হল,-ঝাড়ুদার সুখলাল । মাত্র কয়েক ধাপ ওপর উঠেছিল, রম্ভাকে নামতে দেখে নেমে গিয়ে পথ ছেড়ে দাঁড়াল। ঝাড়ুদার সুখলাল আশ্চৰ্য্যরকম সুপুরুষ। কোন রাজা মহারাজা কিম্বা দেশী বা বিদেশী সম্লান্তম্বরের রূপবান পুরুষের ঔরসে তার জন্ম হয়েছে সে জানে না। জানিবার দরকারও নেই। কিছু এসে যায় না। সমাজ তাকে ' এ বিষয়ে পুর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। যে স্তরে তার স্থান তার চেয়ে নীচু স্তর তো আর নেই, কারো তাই ক্ষমতাও নেই তাকে নীচে নামায় বা বর্জন করে। আন্তাকুড় থেকে আবর্জনাকে বর্জন করার ঠাই কই ? WS