পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা রঙচটা তোরঙ্গ আর সতরঞ্চি জড়ানো বিছানা। তবু সে ভদ্রলোক । বাড়ীতে ওকে নিজেদের মধ্যেও রাখা যায় না, চাকর বাকরের সঙ্গে ও থাকিতে দেওয়া চলে না । তার চেয়ে এ ঘরে থাকাই ভাল । “তোমার আমি এতটুকু অসুবিধা করতে চাই না মোহন। আমি যে আছি তুমি টেরও পাবে না। বাবা । যা তুমি করছ বুড়োর জন্যে অন্য কেউ কি করত ? পীতাম্বর এই খোপটি বাছিয়া নেওয়ার পর তাকে বাড়ীর মধ্যে থাকিতে দেওয়ার অসুবিধার কথাটা মোহনের মনে পড়িয়াছিল, আগে নয়। অবস্থা বিবেচনা করিয়া, তার মনের ভাব কি দাড়াইবে আগেই অনুমান কবিয়া পীতাম্বর কি গ্যারেজে থাকা ঠিক করিয়াছে ? মানুষটার এতখানি বুদ্ধি আর কােণ্ডজ্ঞানের অস্তিত্বে মোহনের যেন কিছুতেই বিশ্বাস হইতে চায় না। সহরের জাকজমক, তার গৃহ ও গৃহসজ্জা পীতাম্বরকে এতটুকু অভিভূত করিতে পারে নাই দেখিয়াও মোহন একটু ক্ষুন্ন হয়। এমন নিৰ্বিকার অবহেলার সঙ্গে সে নূতন পরিবেশকে মানিয়া নিয়াছে যে মনে হয় আরও বিরাট আরও অভিনব আরও বিস্ময়কর কিছু সে কল্পনা করিয়াছিল, মনের মত না হওয়ায় বরং আশা ভঙ্গের ব্যথা পাইয়াছে। বাড়ীর সকলে মহোৎসাহে চিড়িয়াখানা মিউজিয়ম দেখিতে যায়, পাশ আনিয়া মনুমেণ্টে ওঠে, নগেন প্ৰায় প্ৰতিদিন এবং তার সঙ্গে দু’একদিন পরে পরে নলিনী সিনেমা দেখিতে যায়, কোনদিন তাদের সঙ্গে কোথাও যাওয়ার জন্য পীতাম্বর ভুলিয়াও অনুরোধ জানায় না। দামী একটি গাড়ী আসিয়া মোহনের শূন্য গ্যারেজ পূৰ্ণ করে, উত্তেজিত আনন্দে সকলে চারিদিকে পাক দিয়া গাড়ীর অঙ্গসৌষ্ঠব নিরীক্ষণ করে, মোহন পুত্ৰস্নেহে বনেটে হাত বুলায়,-পীতাম্বর স্মিতভাবে শুধু একটু হাসে, দু’বার মাথা হেলাইয়া মোহনের গাড়ী কেনাকে সমর্থন জানায়, তারপর বিড়ি টানিতে টানিতে নিজের মনে কি যেন ভাবিতে থাকে । নূতন গাড়ীতে চাপিয়া একদিন সহরে একটু বেড়াইয়া আসার আগ্রহ তার বিন্দুমাত্র দেখা যায় না। শ্ৰীপতি সুযোগ আর স্থান পাইলেই জীবন সার্থক করিয়া নেয়, গাড়ী গ্যারেজ হইতে বাহির হইলে পীতাম্বর কখনো সামনে আসিয়া বলে না, চলে বাবা, আমিও একটু ঘুরে আসি। একদিন মোহন গাড়ীতে এক বাহির হইয়াছে, ভাবিয়াছে পথে গিয়া ঠিক RQ*