পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্রন্থাবলী স্তব্ধ বিস্ময়ে সকলে ভীত দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকে। মোহনের মাথা ঘুরিতে থাকে, সৰ্ব্বাঙ্গ শিথিল হইয়া আসিতে থাকে। সে জানে এখন থামিবার উপায় নাই। অস্বাভাবিক কিছু করিয়াছে স্বীকার করিলে চলিবেন । “কখন এলে ঝরণা ? ঝরণা উঠিয়া দাঁড়ায়, মুচকি হাসিয়া বলে, “ও, এই ব্যাপার! এক কাজ করে। বৌদি, দু’টাে তিনটে লেবু কেটে সরবৎ করে খাইয়ে দাও ; এত ভূডকে যােচ্ছ কেন ? একেবারে অভ্যাস নেই, কার সঙ্গে ভদ্রত রাখতে দু'এক পেগ খেলেছেন-মাথা ঘুরে গেছে। এতে ভাবনার কি আছে ? \ éf†ဥ মোহন একদিন সন্ধ্যার সঙ্গে দেখা করিতে গেল । নিজের গাড়ীতে স্টেশনে আসিয়া মোহন ট্ৰেণ ধবিল ! অত দামী গাড়ী নিয়া সন্ধ্যার বাড়ী ধাইতে তারা যেন কেমন লজ্জা হইতেছিল। কলেজে পড়ার সময় মোহনের বড় টানাটানি চলিত। বেশী টাকা হাতে, পাইলে ছেলে বিগড়াইয়া যাইবে ভয়ে বাবা তাকে টাকা পাঠাইত হিসাব করিয়া । সন্ধ্যা হয়তো জানে তার অবস্থা বিশেষ ভাল নয়। হঠাৎ অতি দামী একটা গাড়ী নিয়া হাজির হইলে সে হয়তো ভাবিয়া বসিবে, গাড়ীটা দেখাইতে সে গিয়াছে, নিজের বড়লোকত্ব ঘোষণা করা তার উদ্দেশ্য। মনে মনে সন্ধ্যা হয়তো একটু হাসিবে। তার চেয়ে আগে যেমন ট্রেণে বাসে ওদের বাড়ী যাইত, আজিও তেমনি ভাবেই যাওয়া ভাল । কলিকাতা আসিয়াই একদিন সন্ধ্যার বাড়ী যাইবে ভাবিয়াছিল। বিবাহের পর সন্ধ্যাকে দেখে নাই, দেখিতে খুব ইচ্ছা হইতেছিল । তবু এতদিন যাই যাই করিলা শুধু দিন পিছাইয়া দিয়াছে। চিন্ময়কে না জানাইয়া সন্ধ্যার কাছে যাওয়া যায়। সে অধিকার তার আছে। চিন্ময়ের সঙ্গে সন্ধ্যার সম্পর্ক গড়িয়া উঠিবার আগে সে তাদের বারাকপুরের বাড়ীতে অনেকবার গিয়াছে, সন্ধ্যার সঙ্গে তাদের প্রকাণ্ড বাগানে স্থাটিয়া বসিয়া গল্প করিয়াছে, ট্রাঙ্ক রোড ধরিয়া দু’জনে গল্প করিতে করিতে আগাইয়া গিয়াছে অনেক দুর। θΣ ο