পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী ‘সত্যি ? চিন্ময় তবে এসেছিল ? তবু ভাল, আমি ভাবছিলাম, তোমাদের বুঝি কথাও বন্ধ।” ‘বন্ধু তোমার আসেনি, তবে আমাদের কথা বন্ধ নয়। দরকার হলে আমরা ফোনে কথা বলি।” মোহন ধীরে ধীরে বলিল, “দরকার হলে ফোনে কথা বলে । কি রকম দরকার হলে ? সন্ধ্যা একটু হাসিল। ‘যেমন ধরে আমার কিছু বাড়তি টাকা চাই। আমি ফোন করে টাকার কথা বলি, ও লোক দিয়ে টাকা পাঠিয়ে দেয়।” V “শুধু টাকার কথা বলে ? আর কোন কথা হয় না ?” “হয় বৈকি।” সন্ধ্যার মুখের হাসি নিভিয়া যায় ৷ তীক্ষ্মদৃষ্টিতে সে মোহনের মুখের ভাব লক্ষ্য করে, ভুরু কুঁচকাইয়া বলে, “খারাপ লাগছে শুনতে ? আমাকে ভোগ করতে দিই না, তবু টাকা চেয়ে নিই, এটা খুব খাপছাড়া মনে হচ্ছে ? তাতো মনে হবেই, তোমরা পুরুষ মানুষ যে ! বিয়ে করবার আগে তোমরা বড় বড় কথা বলতে পাের, বিয়ের পর সে সব কথা মনে রাখলে দোষ হয় আমাদের । সবাই নাকি জানে ওসব বড় বড। প্ৰতিজ্ঞ ভালবাসার প্ৰিলাপ ! সবাই জানে জানুক, আমি জানি না । জানতে চাই না । বিয়ে করবার জন্য পায়ে ধরে তো সাধিনি আমি ? স্পষ্ট বলেছিলাম, টাকার জন্য তোমায় বিয়ে করছি, যা খুশী করব, যেখানে খুশী থাকিব, কিছু বলতে পাবে না। ভাল না লাগে একসঙ্গে থাকিব না, কিন্তু যতকাল বঁচি আমায় টাকা দিয়ে যেতে হবে। মাসে মাসে আমার মিনিমাম কত টাকা চাই তাও বলেছিলাম। ও যদি মনে করে থাকে আমার সে সব ছলনা, আমি দুষ্টামি করে আবোল তাবোল বকছি, ওর সঙ্গে খেলা করছি, তার জন্য কি আমি দায়ী ? তোমরা যে কি দিয়ে গড়া বুঝতে পারি না, এখনো ওর ভুল ভাঙ্গলো না। এখনো বিশ্বাস করে আমি ওকে ভালবাসি, আমার একটা পাগলামির পিরিয়ড চলছে, এটা কেটে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।” “ভালবাসায় তুমি বিশ্বাস কর না ?” 9 8