পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক-গ্ৰন্থাবলী “ছেলেমেয়ের ব্যাপার ? মাথা খারাপ নাকি তোমার ? সন্ধ্যা পথের দিকে মুখ ফিরাইয়াছিল। মোহনের অজ্ঞাতেই গাড়ীর গতি বাড়িয়া গিয়াছে। হঠাৎ সন্ধ্যার অস্ফুট কাতরোক্তি তার কানো গেল, "আস্তে চালাও না একটু ! মাগো, একটু আন্তে চালাও । সবাই কি সমান তোমরা ? গাড়ীর গতি শ্লথ হইয়া আসিলে সে যেন আরাম বোধ করিল, ভাল করিয়া হেলান দিয়া বসিয়া দু’আঙ্গুলে আলগেছে মোহনের বাহুমূল চাপিয়া ধরিল -- “মেয়েদের মেয়ে বন্ধু থাকে, আমার বন্ধু পুরুষ,—তুমি। আমাকে তোমায়ু খাপাছাড়া মনে হত, ঠিক ঠিক বুঝে উঠতে পারতে না-এখনো খাপছাড়া লাগে । তার কারণ, তোমার সঙ্গে আমি ঠিক বন্ধুর মত ব্যবহার করতাম। তুমি না। থাকায় ক’বছর বড় কষ্ট পেযেছি মোহন । এমন এক ল| মনে হ’ত নিজেকে কি বলব ।” মোহন মুখ খুলিবার সঙ্গে সঙ্গে সে বলে, “না না, তুমি চুপ করে থাকে। আমায় কথা বলতে দাও ।” তবু মোহন বলে, “তোমায় একখানা চিঠি লিখেছিলাম।” ‘মনে আছে, জবাব দিইনি। চিঠি । মনের বোঝা কমাতে রোজ যার সঙ্গে কথা বলা দরকার, তার সঙ্গে চিঠি লেখালেখি কবে কি হ’ত ?—জানে। মোহন, আসলে আমি চিরদিন খুব ভীরু আর শাস্ত ছিলাম। তুমি ভাবতে সন্ধ্যা বুঝি খুব তেজী একগুয়ে স্মার্ট মেয়ে, কিন্তু ভেতবে সত্যি আমি খুব ঠাণ্ড ছিলাম। আব দশটি মেয়ের সঙ্গে তাদের মত চলতাম, শুধু নকল করতাম ! কোনদিন কোন বিষয়ে কাউকে ছাড়িয়ে যাইনি। জানো, তুমি ছাড়া কোন ছেলে আমাকে কোনদিন একলা বেড়াতে পৰ্য্যন্ত নিয়ে যেতে পারেনি ? দু’চার জন মেয়ে কাছে থাকলে বুক ফুলিয়ে ছেলেদের সঙ্গে ইয়ার্কি দিতাম, এমন ভাব দেখাতাম যেন আমার অসাধ্য কাজ নেই। কেউ না থাকলেই আমার বুক দুৰ্ব্ব দুরু করত। এখন আমি যার-তার সঙ্গে রাত বারোটা পৰ্য্যন্ত বাইরে কাটিয়ে দিই, হোটেলে বসে ককটেল খাই। কেন জানো ? ওঁর ভীষণ ভােলাবাসা সইতে পারি না 不司 可不一” ভীষণ ভালবাসা ! চিন্ময়ের মতিগতি ভাল করিয়া জানা না থাকিলে মোহনও হয় তো ভীষণ ভালবাসার মানে বুঝিয়া নিত কড়া ভালবাসা, দুর্দান্ত ভালবাসা । সন্ধ্যা কি অর্থে ‘ভীষণ' বিশেষণটি ব্যবহার করিয়াছে মোহন বুঝিতে পারে। VV8