পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা আমাকে জ্বালাতন কোরো না । তোমার যা দরকার হবে মার কাছে চাইবে । মা বললে কিনে দেব । সকলে মুখ কালো করিয়া থাকে। সত্যই তো । সকলেই জানে। নগেনের একটি মোটর সাইকেলের সাধ অনেকদিনের। বাপের কাছে অনেকবার চাহিয়া পায় নাই। বাপের মৃত্যুর পর মোহন ভাই-এর জন্মদিনে উৎসব করিয়াছে এবং সেই উপলক্ষে ভাই-এর পুরাণে সাধটা মিটাইয়াছে। সে কি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ? মারা কি উচিত হইয়াছে ও রকম বিশ্ৰী মন্তব্য করা যে ভাইকে মারিয়া নিষ্কণ্টক হওয়ার জন্যই সে তাকে মোটর সাইকেলটা উপহার দিয়াছে ? ছেলের কাছে মা আরেকবার হারিয়া গেলেন । ডাক্তার এবং ডাক্তারখানা বাড়ীর প্রায় পাশেই বলা যায়। ডাক্তার আসিয়া ঝরণার মাচকানো হাতে ওষুধের প্রলেপ দিয়া ব্যাণ্ডেজ বাধিয়া এবং দু’জনের কাটা ছড়ায় ওষুধ লােগাইয়া বলিয়া গেলেন, ‘খুব অল্পের উপরেই গেছে। আর কিছু করতে হবে না।” ঝরণাকে বলিলেন, “দু'একদিন খুব ব্যথা হবে, বাস।” ডাক্তার চলিয়া যাওয়ার পর ঝরণা। আবার কাতরাইতে আরম্ভ করিলে মোহন বলে, “তোমার নিজেরই দোষ। ছেলেমানুষ নতুন গাড়াটা পেয়েছে, তোমায় ক্যারিয়ারে চাপিয়ে চালাতে পারে ? ম্পিডে চলার সময় অ্যাকসিডেণ্ট হলে কি হত বল তো ? নগেনের হয়তো আজ প্ৰাণ যেত !” বলিয়াই মোহন টের পায় এটা তার কঠোরতা নয়, নিষ্ঠুরতা নয়, স্রেফ গ্ৰাম্যতা। সামান্য আহত নগেনকে দেখিয়াই মা যেমন আত্তনাদ করিয়া তার উপর গায়ের ঝাল ঝাড়িতে চাহিয়াছিলেন, ঝরণা ক্যারিয়ারে চাপিয়াছিল বলিয়াই অ্যাকসিডেণ্ট ঘটিয়াছে ঘোষণা করিয়া সেও ঠিক এইরকম গায়ের ঝাল ঝাড়িতেছে! ঝরণা উঠিয়া দাড়ায়। বলে, “যাই, বাড়ী গিয়ে শুয়ে থাকি।” কী কাতরতা ফুটিয়াছে। নগেনের মুখে। লজ্জায় দুঃখে মরিতে চাওয়ার মত। \98)