পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা কাল একটা গাড়ী বেচেছি। ধীরেনবাবু একটা গাড়ী। কিনবেন শুনলাম কি না, চেনে না। ধীরেনবাবুকে ? কাছেই থাকেন, একুশ নম্বর বাড়ীতে। তা খবরটা শুনে মোটরওলার দোকানে গিয়ে বললাম, একজন গাড়ী। কিনবে, ঠিকানা বললে আমায় কত দেবে ? ঠিকানা নিয়ে ওরা লোক পাঠিয়ে দিলে, সে হল গিয়ে ওমাসের তেইশ তারিখ। কাল ধীরেনবাবু গাড়ীটা কিনেছেন। আমি ভাবছিলাম মোটরওলার ঠকাবে বুঝি, তা গিয়ে চাইতেই কুড়িটা টাকা দিয়ে দিলে। কলকাতার লোকেরা বডড ভাল বাবা, কেউ কাউকে ঠকায় না।” “মোটে কুড়ি টাকা দিলে ?” “ঠিকানা বলার জন্য আর কত দেবে বাবা ? ওই ঢ়ের দিয়েছে। গাড়ীটা, বিক্ৰী করেছে। ওদেরি লোক । নিজে যদি কারো কাছে একটা গাড়ী বেচিতে পারি-” মোহন নিজে হইতে সাগ্রহে বলিয়াছিল, “আমার জানা শোনা কেউ কিনবে শুনলেই আপনাকে জানাব। কুড়ি টাকা নয়, ফুল কমিশন আদায় করে নেবেন কিন্তু। এক কোম্পানী দিতে না চায়, অন্য কোম্পানী দেবে।’ যত পারে নতুন নতুন লোকের সঙ্গে পীতাম্বর পরিচয় করে। মোহনকে সে কোন অনুরোধ করে না, মোহনের যারা পরিচিত তাদের দিয়া চেনা লোকের সংখ্যা বাড়ায়। পরিচিত লোক মোহনের কাছে আসিলে বাড়ীতে থাকিলেও সে সামনে আসে না, অচেনা লোক আসিলে ফস। জামা কাপড় পরিয়া গিয়া হাজির হয়, মোহনের সঙ্গে অকারণে দু’চারটি কথা বলে, পারিলে নতুন লোকটির সঙ্গেও বলে । বেশীক্ষণ থাকে না, মোহনকে বিরক্ত হইবার সময় দেয় না । দু'একদিনের মধ্যে, তাকে ভুলিয়া যাওয়ার সময় পাওয়ার আগেই, সে নতুন লোকটির বাড়ীতে যায়, বলে, ‘মনমোহনবাবুর বাড়ীতে আপনার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। ওখানেই থাকি আমি। এক গাঁয়ে বাড়ী আমাদের, সম্পর্ক কিছুই নেই, তবে মোহন আমায় কাকা বলে ডাকে ৷” তারপর আলাপ ঘনিষ্ঠ হইয়া আসিলে নিজেরই তোলা প্রসঙ্গের আলোচনা করিতে করিতে বলে, “খাটি কথা, ঠিক বলেছেন । ব্যবসা ছাড়া পয়সা নেই। ওই মতলবেই এসেছি কলকাতায়, একটা কিছুতে নেমে পড়ব। তা আমরা হলাম অজ্ঞ গেয়ে লোক, আপনাদের বুদ্ধি পরামর্শ সাহায্য না পেলে-” voca