পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা একটু বিশ্বাস আর সহানুভূতি মানুষের মধ্যে জাগাইতে পারিলেই এই সাহায্যটুকু সে অনায়াসেই পাইবে । পাইবে কেন, পাইতেছে। মানুষ বড় ভাল, বড় উদার । বাড়াবাড়ি করিলে, গায়ের উপর গিয়া পড়িলে, মানুষ বিরক্ত হয়, রাগ করে। অন্যায় দাবী নিয়া উপস্থিত হইলে মানুষ প্ৰত্যাখ্যান করে। কিন্তু যার যতটুকু প্ৰাপ্য কেউ তা ফাকি দেয় না। তাই যদি দিত, চাহিয়া পাওয়ার বদলে টাকা কি সে উপাৰ্জন করিতে পারিত কোনদিন ? উপাৰ্জন বাডানোর কল্পনা করা চলিত ? একটি মোটর গাড়ী বিক্ৰী করিয়া স্বপ্ন দেখিতে পারিত ভবিষ্যতে মোহনের মত নিজের মোটর গাড়ী চাপার ? সারাদিন ঘুরিয়া ঘুরিয়া পা টনটন করে, অনেক দূর হইতে আশ্রয়ে ফিরিবার সময় কি যে লোভ হয় ট্রামে বা বাসে উঠিয়া বসিবার ! কিন্তু তখন পীতাম্বরের আপনজনকে মনে পড়ার সময় । সারাদিন করে। কথা তার মনে থাকে না, খাতা দেখিয়া দেখিয়া এক ঠিকানা হইতে সে শুধু আর এক ঠিকানায় যায়, কে কি কিনিবে আর কে কতটুকু লাভের ভাগ দিবে। তাই শুধু সে ভাবে । খাতাটি পকেটে ভরিয়া মোহনের বাড়ীর দিকে পা বাড়ানো মাত্ৰ সহরের মানুষের দখল একেবারে শেষ হইয়া যায়, গ্ৰাম আর গ্রামেব আপন জনেরা সকলে মনের মধ্যে ভিড় করিয়া আসে, মনের আড়ালে গৃহিণী আর ছেলেমেয়েরা যেন এই সুযোগের জন্য ওৎ পাতিয়া থাকে । ট্রামে বা বাসে পীতাম্বরের তাই আর চাপা হয় না । গ্রামে অকৰ্ম্মণ্য পীতাম্বরের কাছে ওদের জন্যই একটি পয়সার দাম ছিল অনেক, এখানেও তাই আছে । মোহনের বাবার ছিল অনেক টাকা । সে পাচ সাত শ’ টাকার সওদা করিতে সহরে আসিত । সহরের পথে হঁটিয়া বেড়ানোটা ছিল তার সখ্য, ট্রাম বাসের খরচ বঁাচানোর প্রয়োজনে নয়। " ভাবিতে ভাবিতে আলোকিত সহরের পথেই পীতাম্বর হাটে, গাড়ী ঘোড়া Vy