পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা কোণে পড়ে আছে, দু’বেল শুধু দুটি খায়, কি বলে ওকে আমি তাড়িয়ে দেব ? সেটা কি উচিত হবে ?” লাবণ্য তা জানে না । হঠাৎ তার মনে একটা ভাসা ভাসা সন্দেহ জাগিয়াছে, ওই লোকটার জন্যই তার অসুখ বুঝি সারিতেছে না, আরও বেশী ভুগিতেছে। পীতাম্বর যে মোহনদের নির্বাংশ হইবার শাপ দিত, গ্রামে থাকিতে এ কথাও লাবণ্যের কানে গিয়াছিল। মোহনের এক বুড়ী পিসী তাকে এমন কথা ও বলিয়াছিল যে পীতাম্বরের শাপেই তার ছেলেপুলে হইতেছে না—তাকে সন্তুষ্ট করিয়া সে যাতে অভিশাপ ফিরাইয়া নিয়া তাকে আশীৰ্বাদ করে সে ব্যবস্থা করা উচিত । মনে তখন জোর ছিল,- কলেজে পড়া, ইংরাজি সাহিত্য পড়া মনে । গ্ৰাম্য কুসংস্কার তুচ্ছ করিবার জন্য মোহনের তাগিদাও ছিল কড়া। বুড়ী পিসীর কথাটাকে সে আমল দেয় নাই । আজ মনে হয় অসম্ভব কি ? অসুখ তার মিথ্যা নয়। কিন্তু পীতাম্বরের জন্যই হয় তো তার অসুখ হইয়াছে। অসুখের জন্য অসুখ নয়, তার যাতে ছেলেপিলে না হয়, মোহন যাতে নির্বংশ হয়, সেই জন্যই অসুখ। মন্ত্রতন্ত্র তুকতাক কিসব খাটাইতেছে লোকটা কে জানে। লাবণ্য ওসব বিশ্বাস করে না, অত কুসংস্কার তার নাই, কিন্তু যদিই বা কিছু সত্য থাকে ও সমস্তের মধ্যে ? তারা বোঝে না। এমন কিছু যদি থাকে ? “গ্রামে থাকতে আমাদের খালি শাপ দিত মনে নেই তোমার ? আমাদের সৰ্ব্বনাশ হোক তাই শুধু ও চায়। খারাপ মতলব না থাকলে সঙ্গে এল কেন আমাদের ?—আমাদের চোখের আড়াল করবে না । গ্রামের লোকেরা বলত শোননি। ওর অনেক রকম বিদ্যা জানা আছে ? আমাদের ওপর কিছু খাটাবে বলে সঙ্গে এসেছে। নইলে আমায় ওষুধ দেবে না কেন বল ? এদিকে আমাদের খারাপ করার জন্য ক্রিয়াট্রিয়া করছে, আমায় ভাল ওষুধ দিলে দুটাে শক্তিতে বিরোধ বাধবে বলে তো ?’ লাবণ্যের কথা শুনিতে শুনিতে মোহন আমোদ পায় না, অবজ্ঞার সীমা থাকে না তার। অশিক্ষিতা গেয়ে মেয়ে হইলেও কথা ছিল, লাবণ্য বি-এ পাশ করিয়া এম-এ পড়িতেছিল, তার তিনটি ভাই বৈজ্ঞানিক, একজন প্ৰায় বিখ্যাত। মফস্বলের সহর হইলেও তার বাপের বাড়ী বড় সহরে-একটা ভাল কলেজ আছে, VV