পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা “বিজ্ঞান প্ৰেমকে বাস্তব ব্যাপার বলে নাকি ?” ‘বলে বৈকি। কাব্য সাহিত্যে প্রেমের ভাববাদী ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা হয়। বিজ্ঞান বলে, দেহ আর মস্তিষ্কের বিশেষ ক্রিয়া প্রক্রিয়া হল প্ৰেম। ওটা কেন আর কি ভাবে ঘটে বিজ্ঞান সঠিক বলতে পারে না। আজ পারে না, একদিন নিশ্চয় পারবে ।” রাত্ৰে ইজিচেয়ারে চিৎ হইয়া মোহন একটি বিলেতী ম্যাগাজিনে গল্প পড়িতেছে, গল্পটির শেষে পাওয়া গেল একজন বিখ্যাত যাদুকরের সচিত্ৰ প্ৰবন্ধ । কয়েকটি অলৌকিক অবিশ্বাস্য পুরাণে ম্যাজিক কিভাবে দেখানো হয় তার সাধারণ বোধগম্য লৌকিক ব্যাখ্যা ও বিবরণ আছে। একজন পৃথিবী বিখ্যাত ইংরেজ দার্শনিক সম্পর্কে একটি গল্পও আছে। অনেক দিন আগে নিজের বোনের সহযোগিতায় যাদুকর একটি অদ্ভুত ম্যাজিক দেখাইয়াছিলেন, দার্শনিক উপস্থিত ছিলেন। অদ্ভূত অবিশ্বাস্য সেই খেলাটি দেখিতে দেখিতে বার বার দর্শকদের গায়ে কঁাটা দিয়া উঠিয়াছিল, তিনজন মহিলা। মূছ। গিয়াছিলেন । ম্যাজিক দেখানোর শেষে যাদুকর বলিয়া দিয়াছিলেন তাব খেলায় অলৌকিক কিছুই নাই, আগাগোডা সবটাই কৌশল। কিন্তু খেলাটি শেষ হওয়া মাত্র দার্শনিক উঠিয়া দাড়াইলেন, হাত তুলিয়া প্রেক্ষাগৃহের দর্শকদের চুপ করাইয়া আবেগ কম্পিত্যকণ্ঠে ঘোষণা করিলেন, যাদুকর যাই বলুন তিনি বিশ্বাস করেন না অলৌকিক শক্তির সাহায্য ছাড়া এই অসম্ভব ব্যাপার সম্ভব হইতে পারে। যাদুকরের ভগিনীর নিশ্চয় কোন অজ্ঞাত অশরীরী ক্ষমতা আছে। ব্যবসার খাতিরে সেদিন যাদুকরকে চুপ করিয়া থাকিতে হইয়াছিল। এতদিন পরে সেই ম্যাজিকের ফাকিটা প্ৰকাশ করিয়াছেন। বিশ্বাস ? ম্যাজিকের ফাকি তুচ্ছ হইয়া যায়, প্ৰেক্ষাগৃহে দার্শনিকের কাল্পনিক মুক্তি আর শত শত দর্শকের মুখ ফিরাইয়া তার কথা শুনিতে শুনিতে রোমাঞ্চ অনুভব করার দৃশ্যই মোহনের কল্পনায় জাগিয়া থাকে। এই বিশ্বাসের কথাই কি জগদানন্দ বলিয়াছিল ? ভুল হইলেও যা বিশ্বাসের জোরে ঠিক, মিথ্যা হইলেও যা বিশ্বাসের জোরে সত্য, যুক্তিতর্কের বিরুদ্ধেও যা টিকিতে পারে ? লাবণ্য কি সত্যই বিশ্বাস করে পীতাম্বরের জন্য তার অসুখ সারিতেছে না, বাড়িতেছে ? VV)