পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা কিছু ভাল লাগিতেছে না, কেমন অস্থির অস্থির করিতেছে মনটা তার। দুর্গার কাছে গেলে কি এখন ভাল লাগিবে ? দুৰ্গার শান্ত ঘরোয়া ব্যবহার প্রথমটা শ্ৰীপতির বড়ই পছন্দ হইয়াছিল, এখন কেমন যেন ভোতা মনে হয় তাকে। দুর্গার সরল সহজ কথা আন্তরিক সহানুভূতি আর তেমন মিঠা লাগে না। কাবখানার ভিতরের গরমের পর বাহিরের শীতে কাতর হইয়। ঘরের কোণে জড়সড় হইয়া শ্ৰীপতি বসিয়া থাকে, এমন অসহায়, এমন অকৰ্মণ্য মনে হইতে থাকে নিজেকে, এমন অর্থহীন হইয়া যায় বঁচিয়া থাকা । টাকার জন্য প্ৰাণপাত করিতে সে রাজী, তার কোন সুযোগ নাই। কদমকে ছাড়িয়া দিন কাটে না, তাকে কাছে রাখা চলে না । বিড়ি খাইতে ভাল লাগে, বিড়ি কেনা বন্ধ করিতে হয় । কারখানায় কাজ আরম্ভ করিয়াই সে বুঝিতে পারিয়াছে দয়া করিয়া তাকে কাজ দেওয়া হয় নাই, তাকে খাটাইবার জন্য কর্তাদের আগ্রহের সীমা নাই । তাকে বেশী বেশী খাটিবার সুযোগ দিয়া তাকে খাটাইতে পারিয়াই যেন তারা বত্তিয়া যায় ! ভাগ্য যেন পরিহাস জুড়িয়াছে তার সঙ্গে । এর চেয়ে গ্রামে থাকাই তার ভাল ছিল ! যা জুটিত তাই খাইত, না হাসিলেও কদম কাছে থাকিত, এত সব দুশ্চিন্তার ধারও ধারিতে হইত না । ভাবিতে ভাবিতে শ্ৰীপতির মরিয়া হওয়ার প্রেরণা জাগে । কেন এত ভাবনা ? কি হইবে নিজেকে এমনভাবে কষ্ট দিয়া ? খেয়ালমত যা খুশী সে করুক না কেন ? যা ইচ্ছা করুক। কদম, কদমের জন্য তাকে এরকম যেমন খুশী খাটানোর নিয়ম সে মানিবে না। এভাবে খাটিবে না। কারো তোয়াক্কা না রাখিয়া বাধা নিয়মে খাটিয়া যা রোজগার করিবে এক পয়সাও সে তাকে পাঠাইবে না, রোজগারের সব টাকা খরচ করিবে নিজের জন্যে, ফুত্তি করিয়া দিন কাটাইবে । ভবিষ্যৎ ভুলিয়া মজা করার চেয়ে মজা আর কি আছে! মজুরি পাইয়াছে পশু, এখনো কদমকে পাঠানো হয় নাই। দু’একদিনের মধ্যে মোহনের কৰ্ম্মচারী দেশে যাইবে, তার সঙ্গে পাঠাইবে ভাবিয়া রাখিয়াছে। কদমের জন্য টাকা না রাখিয়া জ্যোতি আর মদনকে সাখী করিয়া সে যদি দুৰ্গার কাছে যায়, চাপাকে \9ዓ¢