পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী ধরে একজনের অসুখের জন্য দু’রাত জাগিয়াছে। শ্ৰীপতির হৃদয়ে শুরু হয় মোহ আর ভয়ের লড়াই, দুর্গাকে সে দুহাতের মধ্যে বঁাধিতে চায় আর তারই মধ্যে অনুভব করে দুর্গার বঁাধন। দিন দিন তারই মোহকে জোরালো করিয়া দুৰ্গা তার বাধন শক্তি করিবে, তাকে বশে রাখিবে। দুর্গাকে আজ তার মনে হয় শোনা গল্পের সেই রহস্যময় দেশের নারী, যে দেশেব মেয়েরা বিদেশী পথিককে বশ করিয়া রাখে, পথিক আর দেশে ফেরে না । দুর্গার সঙ্গে সম্পর্ক চুকাইয়া দিতে আসিয়াছিল, ঝগড়াটা না জমিলেও, সম্পর্ক সত্যই চুকিয়া গেল। i নিজের সব ভার তার উপর ছাড়িয়া দেওয়ার জন্য ওৎ পাতিয়া আছে, আর কি তার ধারে কাছে ঘোষিতে পারে শ্ৰীপতি ? একটা কদমের ভাব সে বহিতে পারে না, দুর্গার ভার নেওয়ার ক্ষমতা সে কোথায় পাইবে ? একটির পর একটি রাত্রি কাটে, জ্যোতি আসিয়া দুৰ্গার তাগিদ। জানায়, জীবনব্যাপী বিরহ কল্পনার প্রথম দিকের ঘনীভূত বিষাদ বিষের মত শ্ৰীপতিকে উত্তেজিত করিয়া তোলে । একটিবার, শেষবারের জন্য শুধু একটিবার দুর্গার সঙ্গে দেখা করিয়া আসার কথা ভাবিতে ভাবিতে শ্ৰীপতি ছটফট করে । দুৰ্গা সস্তা ছিল, দাম বাড়িয়াছে । তাকে বশ করিয়া শাড়ী গয়না আদায় করার মতলব দুর্গার শুধুই মতলব, তাকে ও দুৰ্গা চায়। শ্ৰীপতিকে একজন চায়, সিংপুরের হাতুড়িপেটা গেয়ে কামার শ্ৰীপতিকে, মজুর শ্ৰীপতিকে ! জাগিয়া জাগিয়া কল্পনার স্বপ্নে তো নয়ই, ঘুমের স্বপ্নেও কোনদিন এমন ঘটিয়াছে কিনা সন্দেহ। কদমকে সে চায়, মনে প্ৰাণে চায়, কিন্তু কদম তাকে চায়। কিনা তা সে জানে না । কদম কোনদিন জানিতে দেয় নাই। চিরদিন সে-ই কদমকে চাহিয়া আসিয়াছে এবং বিয়ে করা বৌ বলিয়া সংসারের নিয়মে কদম তার চাওয়ার মান রাখিয়াছে। শ্ৰীপতির জীবনে দুৰ্গাই এ জগতের প্রথম এবং একমাত্ৰ নারী তাকে যে পুরুষের সম্মান দিয়াছে। তার কাছে দুৰ্গা তাই হইয়া উঠিয়াছে রাজার কাছে রাজ্যের মত দামী । রাণীর জন্য রাজার রাজ্য ত্যাগ করার মতই কঠিন হইয়া উঠিয়াছে কদমের জন্য দুৰ্গাকে ছাটিয়া ফেলা। V) -