পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা জ্যোতির মারফতে দুৰ্গার তাগিদ ক্ৰমে ক্ৰমে কমিয়া আসিয়া আপনা হইতেই একেবারে বন্ধ হইয়া গেল। জ্যোতি আসিয়া আর বলে না যে দুর্গা তাকে যাইতে বলিয়াছে। শুধু এই তাগিদাঁটুকুর জন্য কয়েকদিন শ্ৰীপতি উৎসুক হইয়া রহিল, কখন জ্যোতি আসিয়া বলিবে যে দুৰ্গা ডাকিয়াছে। তারপর, জয়ী পুরুষের গর্ব আর তেজের অনুভূতি নিস্তেজ হইয়া আসিল, চোখে দেখাব চেয়ে দুর্গাকে কল্পনায় স্পষ্টতর দেখার দৃষ্টি হইয়া আসিল ঝাপস । দুৰ্গাকে চাহিয়া শ্ৰীপতি আর রাত জাগে না, দুৰ্গাকে চাহিয়া মাঝরাত্রে আর তার ঘুম ভাঙ্গে না। শুধু থাকিয়া গেল একটু জাল! আর একটু মন কেমন করা-মৃদু এবং স্থায়ী। একটা বড় রকম অসুখ হইয়া কিছুদিন পরে যেন সারিয়া গিয়াছে কিন্তু আগের মত সুস্থ হইতে পারিতেছে না । নিছক মানসিক ক্রিয়া প্ৰক্ৰিয়া নয়। মানুষটাই সে বদলাইয়া গিয়াছে। আগেব মত আর সে বিচলিত হয় না, তুচ্ছ কারণেও নয়, বড় কারণেও নয়। পীতাম্ববের মত তাকেও মোহন তাড়াইয়া দিতে পারে, এ চিন্তায় আর আতঙ্ক জাগে না । কদমকে কাছে আনিয়া রাখিতে ছ’মাস এক বছর বিলম্বের সম্ভাবনা আবে তেমনভাবে কাতর করে না। আজকালের মধ্যে বড়লোক হওয়া যাইবে না বলিয়া দিশেহারা হতাশ কল্পনা নিয়া সে টাকা করার উদ্ভট অসম্ভব ফন্দিফিকিরের জাল বোনে না । কিসে কি হয় কে বলিতে পারে ? দেখা যাক কি হয় । পুরুষমানুষ কারখানায় খাটিয়া যায়, কি আছে তার যে হরাইবার ভয়ে কাবু হইয়া থাকিবে ? শ্ৰীপতি আজকাল এমনিভাবে ভাবে । একটা ধীর শান্ত বেপরোয়া ভাব জাগিতেছে। ধরিতে গেলে সে তো সর্বত্যাগী সাধক সন্ন্যাসী । তার কিসের ভয়, কিসের ভাবনা ? কদম ছিল অভ্যাস। নিছক অভ্যাস । পুরুষানুক্রমিক একটা নেশা । কদমের জন্যই দুর্গার মোহ সে জোর করিয়া কাটাইয়া উঠিয়াছিল \OS