পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা কাজ পাকা করার কথা বলিতে গেলে ঠিক এইভাবে এইরকম ভঙ্গি করিয়া এই কথাগুলিই শঙ্করবাবু তাকে বলিয়াছিল বটে। তেমন বনিবনা না থাকিলেও জ্যোতির সঙ্গে বিবাদ বা বিচ্ছেদ হয় নাই। জ্যোতির অশ্লীল গল্প আজও কিছু কিছু শুনিতে হয়। তবে শুনিতে শুনিতে সে অভিভূত হইয়া পড়ে না বলিয়া, মাঝে মাঝে খাপছাড়া প্রশ্ন করে এবং খাপছাড়া ভাবে হাসিয়া ওঠে বলিয়া, তাকে গল্প শুনাইবার উৎসাহ জ্যোতির ঝিামাইয়া আসিয়াছে। আগে জ্যোতি ছিল বক্তা, শ্ৰীপতি ছিল নীরব শ্রোতা । আজকাল শ্ৰীপতি কখনো কখনো তার অভাব অভিযোগ রাগ দুঃখ আপসোসের কথা বলিতে আরম্ভ করিলে--একটি কলেজে পড়া মেয়ের সঙ্গে জ্যোতির পিরীত জমিয়া নোংরামির ক্লাইমেক্সে উঠিবার মুখে শ্ৰীপতির আপসোস ফাটিয়া পড়িলে-কয়েক মিনিট তাকে চুপচাপ শ্ৰীপতির কথা শুনিয়া যাইতে হয়! খানিকটা অভিভূত ও বিচলিত হইযাই শোনে। মনটা যে তার ধাক্কা খাইয়াছে, নড়িয়া উঠিয়াছে, খানিকক্ষণ শ্ৰীপতির কথা শুনিবার পর তার অস্থিরতা শুরু হইলেই সেটা বোঝা যায়। কত যে আন্তরিকতার সঙ্গেই সে বলে, “তুই বড় বােকা ভাই। তোর কোনদিন কিছু হবে না। সংসারের চালচলন কিছুই বুঝিাসনে তুই।” “কি বুঝিনে ?” “কিছুই বুঝিস নে। কাজ কি তুই বাগিয়েছিস ? নিজের চেষ্টায় ? কাজ যারা বাগিয়ে দিয়েছে তাদের কাছে যা না বোকারাম হাদারাম ! কাজ যারা জুটিয়ে দিল, কাজটা তারা পাকা করে দিতে পারবে না ?” কথাটা যে শ্ৰীপতি ভাবে নাই তা নয়। কিন্তু মোহনকে কাজের বিষয় কিছু বলিতে সে বড়ই সঙ্কোচ বোধ করে । তার লজা হয় । মোহন জগদানন্দকে বলিয়া তাকে যে কারখানায় ভিত্তি হইবার সুযোগ দিয়াছে, কাজ করিয়া কাজ শিখিবার সামান্য মজুরী পাইয়াও সে ষে মোহনের বাড়ীতে আশ্রয় পাওয়ার জন্য কদমকে নিয়মিত দু’চারটিাকা পাঠাইতে পারিতেছে-এই তো যথেষ্ট করিয়াছে মোহন । সাহায্য করিয়াছে। এক মুহুর্তের জন্য শ্ৰীপতি ভুলিতে পারে না যে VV)