পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী মোহন তাকে অনুগ্রহ কবে নাই, কাজটা তাকে ভিক্ষা হিসাবে জুটাইয়া দেয় নাই | যতই দুঃস্থ হোক, নীচু জাতের লোক হোক, মোহনের সে গ্রামবাসী। উঁচু জাতেব ওই পীতাম্বরের মতই সে-ও তার প্রজা নয়, তার এক কাঠা জমির ধারও সে কোনদিন ধারে নাই ! শ্ৰীপতির স্পষ্ট মনে আছে, তাব প্ৰায় সমবয়সী পনের ষোল বছরের মোহন একদিন লুকাইয়৷ তাদের বাড়ী আসিয়াছিল, বহুকালের পুরাণো একটা তলোয়ারে ধার করিয়া দিবার জন্য তার বাবাকে অনুরোধ জানাইয়াছিল । যেটুকু ধািব ছিল তলোয়ারটায় সেটা আরও খানিকটা ভোেত| করিয়া দিয়৷ তলোয়ারটা শুধু ঝকঝকে করিয়া দিয়াছিল তার বুড়ো বাবা । মোহন খুশী হইয়া পুরো একটা টাকা মজুরি দিতে চাহিলে তার বুড়ো বাবা ফোকলা মুখে হাসিয়া বলিয়াছিল, “তোমার খেলনা বানিয়ে দিয়ে পয়সা নেব কি গো ! মোটেই পারি নাকে নিতে ” গ্রামবাসী শত শত প্ৰজা আছে, খাতক আছে মোহনের। তারা একজন কেউ আবদার করিলে মোহন কি তাকে সাথে নিয়া কলিকাতা আসিতে রাজী হইত । তারা দু’জন গরীব। কিন্তু প্ৰজা নয়, গ্রামবাসী। মোহন যথেষ্ট করিয়াছে, গরীব গ্রামবাসী হিসাবে আবার তাকে মজুরি বাড়াইবার ব্যবস্থা করিতে বলিলে অনুগ্রহ প্ৰাৰ্থনা করা হইবে, ভিক্ষা চাওয়া হইবে। মোহন যদি বিরক্ত হয়, যদি বলে যে একটু আশ্রয় দিলেই শ্ৰীপতিরা মাথায় উঠিতে চায়, বড়ই সেটা অপমানের কথা হইবে শ্ৰীপতির ! আগে ছিল না, মান অপমানের এই জ্ঞান শ্ৰীপতি সহরে আসিয়া অর্জন করিয়াছে, কারখানায় অর্জন করিয়াছে। কয়েকমাস আগে হইলে অনায়াসে সময়মত সুযোগমত ভিখারীর মতই মোহনকে সে তার প্রার্থনা জানাইতে পারিত। কিন্তু ভালভাবে কাজ শেখ হইয়াছে, পাকা কাজ ও বেশী মজুরির দাবী জন্মিয়াছে—এই দৃঢ় বিশ্বাসটা তখনও জন্মে নাই। সুতরাং দাবীটা আদায় করিয়া দিবার জন্য মোহনের কাছে আবেদন জানাইবার প্রশ্নও ওঠে নাই। ন্যায্য দাবীর বােধটা জন্মিতে জন্মিতে জন্মিয়া গিয়াছে মান অপমানের নূতন বোধটাও । Yobም8