পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী কাল একাদশী গিয়াছে । আজ সকালে মা’র ফরমাসে সে গোপনে পাঁচ রকম সহরে মিষ্টি সহরের নাম করা দোকান হইতে আনিয়া দিয়াছে। “কাকপক্ষী যেন টের না পায় ছিপতি ।” কাকপক্ষী টের পায় নাই। কে জানে মোহন জানে কিনা যে সে-ও তার একজন বিনা মাইনের চাকরের সামিল হইয়াই চাকরের জন্য বরাদ্দ আশ্রয় ও অন্ন ভোগ করিতেছে। জানা অবশ্য উচিত। অন্য কাজ করে কি করে না সেটা অজানা থাক— প্রায় প্রতিদিন ভোরে সে তো তাকে গাড়ীটা সাফ করিতে দেখিয়া আসিতেছে। তার বাবু ড্রাইভার নাক ডাকিয়া ঘুমায় চিরদিনের অভ্যাসের বশে ভোর রাত্রে ঘুম ভাঙ্গিয়া বিছানা ছাড়িয়া মোহন নতুন গাড়ীর টানে গ্যারেজের দিকে আসে— দেখিতে পায় তার প্রাণের চেয়ে প্রিয় দামী গাড়ীটা শ্ৰীপতি কত যত্নে সাফ করিতেছে। শুধু দ্যাখে না । গাড়ীটার ঝকঝকে তকতকে নতুনত্ব বজায় রাখিবার জন্য মাঝে মাঝে তাকে এখানটা ভাল করিয়া ঝাড়িতে, ওখানটা ভাল করিয়া মুছিতে বলে। অর্থাৎ হুকুম দেয়। বলে, “মাড় গার্ডের ওখানে একটু ময়লা জমেছে শ্ৰীপতি।” “ময়লা নয়। চলটা উঠে মার্চে ধরেছে।” কথাটা প্ৰমাণ করিবার জন্য জায়গাটা সে বার বার ঘষিয়া পুছিয়া দেখায়। হাজার ঘষিয়াও চাদের কলঙ্কের মত মান্ড গার্ডের কলঙ্ক ওঠে না । মোহন আপসোস করিয়া বলে, “এর মধ্যে চলটা উঠে গেল ? কি করে গেল ? অন্য কোন কথাই মোহন তার সঙ্গে বলে না। শ্ৰীপতি গামছা পরিয়া তার গাড়ীটা সাফ করিতেছে দেখিয়াও জিজ্ঞাসা করে না, “তোমার কাপড় নেই শ্ৰীপতি ? পায়জামা প্যাণ্ট নেই ? পীতাম্বরকে তাড়াইবার আগের দিনের ভোরে শুধু একটি নিয়ম-ছাড়া প্রশ্ন সে তাকে করিয়াছিল—“পীতাম্বর ঠাকুর সাধক পুরুষ না-রে শ্ৰীপতি ? তুই তো ওকে জানিস অনেক কাল। উনি যোগ সাধনা ক্রিয়া কৰ্ম্ম খাটাতে পারেন ?” Vy V