পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহরবাসের ইতিকথা ‘বুঝিয়ে বলে।’ “সোজা কথাটা বুঝতে পার না ? সব কিছুতে নগেনের ও সমান ভাগ । ঝবণা ওকে খেলাচ্ছে ভোলাচ্ছে ওই ভাগটাব লোভে ।। নগেনকে টের পেতে দেয়। না-সম্পত্তির ভাগটাই আসল নগেন আসল নয় টের পেতে দিলে কি রক্ষা থাকবে ? একেবারে বিগড়ে গিয়ে হাতছাড়া হয়ে যাবে। নগেন ।” “কিছুই করব না ?” “কিছুই করবে না ! শুধু স্নেহ দেখাবে, বিবেচনা দেখাবে। রোগ হয়ে যাচ্ছে বলে মাছ দুধ মাংস খাওয়াবে, বেড়ানো দরকার বলে কাশ্মীর বেড়াতে পাঠাবে—” মোহনের মুখ দেখিয়া সন্ধ্যা গলা নামাইয়া বলে, “একালের ছেলে তো ? অনেক কিছু জানে বোঝে। কত্তালি করতে গিয়ে ওর রেখ চাপিয়ে দি ও না, বিচার বুদ্ধি চুলোয় দেবার ঝোক চাপিও না। ঝরণার খেলা নিজে বুঝে নিজেকে ও সামলে নেবে। এ সুযোগটা ওকে তোমায় দিতেই হবে । মোহন আচমকা জিজ্ঞাসা করে, “কদিন এখানে থাকবে ?” সন্ধ্যার মুখে রাত্রির কালো ছায়া নামিয়া আসে। ‘কে জানে। কদিনে পেটে ছেলে আসবে বলা যায় কি ? তারপর দশমাস দশদিন । ছেলেটাকে পাচ ছ'মাসের না করে নড়তে পারব কি ?” সন্ধ্যা যেন ধরিয়া লইয়াছে তার ছেলেই হইবে—যেহেতু চিন্ময় ছেলে চায়। মেয়ে যেন তার হতে পারে না ! আজকাল নূতন পরিবেশে যখন সামাজিক, পারিবারিক, দৈহিক ও মানসিক জীবন অনেকটা নিদিষ্ট রূপ পাইয়াছে, মোহন মাঝে মাঝে সহরে বাস করিতে আসার উদ্দেশ্যের কথা ভাবিতে চেষ্টা করে । গ্রাম ছাড়িয়া কেন সে সহরে বাস করিতে আসিয়াছিল ? সভ্যতার সুখ সুবিধা ভোগ করিতে আর সেই সুখ সুবিধা যারা পুরামাত্রায় ভোগ করে তাদের সঙ্গে মিলিতে মিশিতে এবং অর্থেপাৰ্জন করিতে ? কারণটা এখন অসম্পূর্ণ, অর্থহীন মনে হয়। গ্রামে বসিয়া দিনের পর দিন সে কি কল্পনা করিয়াছিল মেটে পথে হাঁটার বদলে পিচঢালা পথে মোটর ইকানো আর গরীব অশিক্ষিত মানুষের বদলে ধনী সুশিক্ষিত মানুষের সঙ্গে মেলামেশা \OSS