পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী গেরুয়া রঙের ছোট টাইট জামাটি গায়ে দিয়ে সে টাকাগুলি ন্যাকড়ায় বেঁধে পকেটে রাখল। এতটুকু দায়িত্ব নিয়েই নিজেকে তার বিপন্ন অসহায় মনে হচ্ছে। আশাকে ইসারায় ডাকতে দেখে আরেকবার বুকটা তার কেঁপে গেল। “জাম পেড়ে এনে আমার জন্যে ।” “আজেন্তু হ্যা, আনিব।” 'মরণ তােমার আঞ্জে হুজুর!”—আশা গা-গুলানাে হাসির সঙ্গে হাত বাড়িয়ে তার চিবুকটা ধরে নেড়ে দিল, “বৌঠান বলতে পার না ? চেরা ঠোঠের ফাঁকে আশার উপরের পাটির দুটি ঘষা শ্বেত পাথরের মতো অনুজ্জল দাঁত সবসময়েই চােখে পড়ে, কথা কইতে বা হাসতে গেলে অন্তরালের আরেকটি দাঁতে খেলে যায় সোনালী ঝিলিক। দাতটি ভেঙেছিল ভূষণ, তারপর সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে দিয়েছে। তেল চপচপে একরাশি চুল দিয়ে মাথার পিছনে সে গোল চাকার মতো প্ৰকাণ্ড চ্যাপ্টা খোপা বেঁধেছে। সুগঠিত দেহ একটু শিথিল হয়ে আসায় অপরিমিত যৌবন ভাটা ধরা জোয়ারের মতো অস্বাভাবিক স্পষ্টতায় থমথম করছে। প্ৰসাদ কাঠ হয়ে দাড়িয়ে থাকে। আশা এইরকম শুরু করলে শরীরটা তার শক্ত হয়ে যায় । রাস্তার মোড়ে বসাকদের মন্দির । সামনে দিয়ে যাবার সময় রাস্তায় দাড়িয়ে মন্দিরের মানুষ-সমান উঁচু চত্বরে মাথা ঠেকিয়ে প্ৰসাদ প্রার্থনা জানাল, আজ যেন ঝড় না। ওঠে, আর-আর, তার যেন সুমতি হয়। আশার সুমতি হোক এই প্রার্থনা জানাবার ভরসা তার হয় না, আশার মনে পাপ আছে মনে করলেও তারই পাপ হবে। আশা ভূষণের স্ত্রী, আশা গুরুজন । বাপের বাড়ি থেকে ফিরে এলে পায়ে হাত দিয়ে আশাকে সে প্ৰণাম করেছিল। আশা কঁচা আম মাখছিল, থুতনি ধরে নেড়ে দেবার সময় ঠোঠে আঙল ঘষে গিয়েছে। চলতে চলতে প্ৰসাদ ঝাল নুন-তেলের স্বাদ অনুভব করতে থাকে। দুঃখে ক্ষোভে চোখে তার জল এসে পড়ার উপক্রম হয়। এ-বিপদ ঠেকানো যাবে না, ঠেকানো অসম্ভব। সুমতি ন! ছাই জাগবে তার, আশা, কাছে এসে দাড়ালে ভাববার ক্ষমতা পর্যন্ত তার লোপ পেয়ে যায়। দুটি হাত দিয়ে আশা তার গলা জড়িয়ে ধরেছে কল্পনা করতে গেলেই তার সর্বাঙ্গ যেন অবশ হয়ে আসে, সত্য সত্যই আশা যেদিন তাকে জড়িয়ে ধরবে সেদিন নিজেকে বঁাচাবার ক্ষমতা সে পাবে কোথায় ? 8 o R