পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী রুখে ওঠার ভঙ্গিতে সে যদি এখন দুপা এগিয়ে যায়, ভূষণ আরও ভয় পাবে, আরও সংশয়-ভরা দৃষ্টিতে তাকাবে, আরও নরম গলায় কথা বলবো হয়তো দুপা পিছিয়েও যাবে! এত ভীরু ভূষণ ? এত সহজে সে ভয় পায় ? কী যে উপভোগ্য মনে হয় এই মুহূর্তগুলি প্ৰসাদের ! শেষ করে চলে যেতে ইচ্ছা করে না। আজ বিকেলেও যার কাছ থেকে ছুটে পালাবার জন্য অদম্য প্রেরণা জেগেছিল, অকারণে সাধ করে তার সামনে প্ৰসাদ দাড়িয়ে থাকে, কিছু বলার নেই জেনেও কৈফিয়ৎ দেওয়ার ভাণ করে বলে, “পড়ে গেলে কি করব ! গাছ চাপা পড়েছিলাম, মরে যেতাম আরেকটু হলে। তখন 'কারে। টাকার কথা খেয়াল থাকে ?” ভূষণ ভয়-বিস্ময়ের ভাণ করে সহানুভূতি জানিয়ে বলে, ‘গাছ চাপ৷ পড়েছিলে ? খুব বেঁচে গেছ তো ।” তখন বিজয়ী বীরের মতো প্ৰসাদ ঘর থেকে বেরিয়ে এল । আশা তাকে দেখে আঁতকে উঠে বলল, “মাগো মা, একি ?” ন্যাকড়ায় বাধা ছ্যাচ জামগুলি দেখিয়ে প্ৰসাদ বলল, “আপনার জন্য 6श्रद्धछिभांभ ।' আশা চাপা গলায় বলল, ‘সত্যি ? বাইরে ঝড়ের মাতামাতি চলছে, ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে স্টোভ জেলে আশা রাধাছে ভূষণের নৈশভোজনের মাংস। ঘরের মধ্যে গন্ধ আর গরমের অসহ সমন্বয় । গায়ের জামা সেমিজ সে খুলে ফেলেছে, ঘামে ভিজে সিদ্ধ মাংসের মতো তার মেটে চামড়া হয়ে গেছে সঁ্যাতসেঁতে । “একটাও ভালো নেই ?” বলে মুখে পুরবার উপযুক্ত জাম খুঁজতে সে ঝুকে পড়ায় কঁধের আলগা আঁচলটিও তার খসে পড়ল, মেঝেতে আছড়ে পড়ে ঝন ঝন শব্দে বেজে উঠল রিঙে বাধা একরাশি চাবি ৷ প্ৰসাদ চোখ বুজতে চায়, বুজতে পারে না। পালিয়ে যাবে ভেবে পক্ষাঘাতগ্রস্তের মতো দাড়িয়ে থাকে। ভূষণকে ভয় দেখিয়ে যে বিদ্রোহী উগ্র আনন্দ তার জেগেছিল, এত সহজে তার চেতনা থেকে লোপ পেয়ে সে-আনন্দ তাকে যেন ঝিমিয়ে পড়তে দেবে না । মহাপাপ থেকে, অনন্ত নরক থেকে নিজেকে বঁাচাবার জন্য মন্দিরের দেবতাকে স্মরণ করতে গিয়ে সে শুধু দেখতে পায় কোমল মাংসে 8 or