পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ङ९द গড়া কঁধ, বাহু আর বুক । আশা সোজা হয়ে দাড়ানো মাত্র তার ঘামে ভেজা দেহটা সে দুহাতে জড়িয়ে ধরল। গভীর আলস্যে হাই তোলার মতো মুখের ভঙ্গি করে আশা বলল, “মরণ তোমার! বাড়ী ভরা লোক নেই ? তবু সে তাকে বুকে চেপে ধরে রাখল আরও খানিকক্ষণ । ছোটছোট কটা চোখের বিহবল দৃষ্টি তার মুখে বুলিয়ে, হলুদ রঙীন আঙলে তার কপালের এলোমেলো চুল সরিয়ে প্রায় অস্ফুটম্বরে ধীরে ধীরে বলল, “পড়ে গিয়েছিলে মাঠে ? খুব লেগেছে ? বিস্ময় বা উত্তেজনা আশার নেই, মদালস অচপল নারীর মতো সে যেন বহু পরিচিত প্রিয়তমকে আলিঙ্গন করেছে। কতটুকু সময়ই বা প্ৰসাদের কাটল সেই ব্যাকুলতাহীন নিবিড় আলিঙ্গনে! ভূষণকে যতটুকু সময় ভয় দেখিয়েছিল তার চেয়ে বেশী নয়। সেইটুকু সময়ের মধ্যেই প্ৰসাদের মনে হল, আশাকে, আশার অবৈধ কামনাকে, আশার দেহকে সে চিনে ফেলেছে। এ যেন একটা রবারের মেয়েমানুষ, পুরাতন ও ফাঁপা। আশার এই দেহের মোহ কাটাবার জন্য দেবতার পায়ে মাথা-কপাল কুটে সে আর্তনাদ করত । ঘুমের ঘোরে পাশ বালিশকে আঁকড়ে ধরার মতাে তাকে আশা জড়িয়ে ধরেছে, তার মধ্যে স্বৰ্গমর্ত ধ্বংসকারী উন্মত্ত কামনা কল্পনা করে সে হাল ছেড়ে দিতে চেয়েছিল । আশার হৃৎপিণ্ডের ধীর আচঞ্চল স্পন্দন অনুভব করতে করতে প্ৰসাদের বুকের টিপটিপানি শান্ত হয়ে গেল, ছেলেদের ভিজে ঢ্যাপস রবারের বলের মতো তার দুটি স্তনের চাপে আগুন ধরা রক্ত তার হয়ে গেল শীতল। প্ৰায় জড়িয়ে জড়িয়ে আশা বলল, “সাফসুফ হয়ে নাও গে । আমার চানের ঘরে ভালো করে সাবান মেখে চান করবে যাও । একটা বড় বোতল এনেছে, সবটা আজ খাইয়ে দেব। বারটা বাজতে না বাজতে ঘুমিয়ে পড়বে।” আশার স্মানের ঘরে গোলাপের গন্ধ, একটানা, অনিবাৰ্য, জমজমাট গন্ধ। তিন আনা দামের একটি সাবানে এত গোলাপের গন্ধ পাওয়া যায়, গোলাপের আরক কত সন্তা । মনটা প্ৰসাদের আশ্চৰ্যরকম সাফ মনে হয়, ঝড় সাফ করে দিয়েছে মৃত্যু ভয়, ভূষণ সাফ করে দিয়েছে মানুষের ভয়, আশা সাফ করে দিয়েছে মাছির মতো অন্যের চটচটে ঘন কামনায় আটকা পড়ার ভয় । ঘষে ঘষে সাবান মেখে প্ৰসাদ স্নান করল। রান্নাঘরের এক কোণে বসে ঠাকুরের পরিবেশন করা ভাত 8 OC)