পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রোমান্স কলসী কঁাখে পাতলা ছিপছিপে একটি বেী বেগুন ক্ষেতের পাশ দিয়ে বাড়ী ফিরছিল। কলসীর ভারে একটু সে বঁাকা হয়ে পড়েছে। পিতলের প্রকাণ্ড কলসী, মাজা ঘষা চকচকে। বৌটির পরণের কাপড়খানি ভেজা, এখানে ওখানে গায়ে এটে গেছে, লটপট করছে। গড়ন পাতলা হলেও স্বাস্থ্য তার খুব ভালো। গায়ে রীতিমত জোর না থাকলে অতবড় কলসীর ভরে কোমর তার মাচকে যেতে পারত | সূৰ্য এখন প্ৰায় মাথার উপর। রোদের তাপে পায়ে-চলা সরু পথটির পাশে ঘাসে ঢাকা মাটি পর্যন্ত তেতে গেছে। ভিজে গামছা ভঁাজ করে বৌটি মাথায় বসিয়েছে। বেগুন ক্ষেতের পরে ছোটখাট আম-কঁঠালের বাগান । গাছে গাছে বাগানটি জমজমাট কিন্তু কেমন যেন শুকনো নিস্ফল চেহারা গাছগুলির, কয়েকটি গাছে শুধু কঁচাপাকা দুচারটি আম ঝুলছে। বাগানের ওপাশে টিনের চাল আর দরমার বেড়ার বাড়ি আছে টের পাওয়া যায়, গাছের ফাকে ভালো করে চোখ পড়ে না। বাকী তিন দিকে দূর বিস্তৃত মাঠ আর ক্ষেত, এখানে-ওখানে বাড়িঘর গাছপালার ছোটছোট চাপড় বসানো। বেগুন ক্ষেতের চারিদিক নিজান, দিনে-রাতে সবসময় কারো করে। এখানে কম বেশি গা ছমছম করে। বেগুন ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে পুরানো প্যাঙাসে আলপাকার উদি। আর কোলবালিশের সরু খোলের মতো প্যাণ্টালুন পরা মাঝবয়সী একটি লোক জোরে জোরে আম-কঁঠালের বাগানটির দিকে চলছিল। বারবার সে বৌটির দিকে চেয়ে দেখছে। গোফ দাড়ি চাছা এবং কানের ডগা পৰ্যন্ত জুলপি তোলা তার লম্বা ফর্সাটে মুখে চোখ দুটি বেশ বড়-বড়, যদিও ছোট হলেই মানাতো বেশি। বাগানে একটা কঁঠাল গাছের নিচে সে বৌটির পথ আটকাল। পাশ কাটিয়ে যাবার পথ অবশ্য চারদিকে অনেক ছিল। পায়ে চলা যে সরু পথটি ধরে বৌটি আসছিল সেটাও কঁঠাল গাছটির হাত তিনেক তফাৎ দিয়েই গিয়েছে। বৌটি নিজেই সরে তার সামনে আসায় এগোবার আর পথ রইল না। 9 SS