পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী ‘ওমা, সুবলিবাবু যে ! পোন্নাম।” “এ তোমার কেমন ব্যাভার সুখময়ী ?” “তোমারি বা এ কেমন ব্যাভার সুবলবাবু, দিন দুকুরে নাগাল ধরা ?” দুহাতে কানা ধরে কলসীটা সে নামিয়ে রাখল। যে কঁাখে কলসী ছিল। তার উল্টো দিকে বেঁকে বেঁকে সোজা করে নিল কোমরটা। সুবলের ক্রুদ্ধ নালিশভরা দৃষ্টি দেখে একবার সে অপরাধিনীর মতো একটু হাসল। অবহেলার সঙ্গে। কঁধে ফেলা ভিজে অচলটি নামিয়ে ধীরে ধীরে ভাজ খুলে আবার ভালো করে গায়ে জড়াল । y ‘গোড়ায় তো ডরিয়ে গেলাম, কোন মুখপোড়া উকি মারছে গো ? শেষে দেখি মোদের সুবলবাবু। নিশ্চিন্দি হয়ে তখন সাতার কেটে চান করলাম।” ফিক করে হেসে লজ্জায় মুখ নামিয়ে মৃদুম্বরে বলল, “তোমার জন্যে। সত্যি তোমার জন্যে-কাল ফিরে যেতে হল। তোমার !” সুবল ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলল, “কাল তো প্ৰথম নয়। ফিরেই তো যাচ্ছি। এলে না কেন কাল ? রাত দুপুর তক শিরীষতলায় মশার কামড় খেলাম। মা মনসা ন করুন,”-দুহাত জড়ো হয়ে সুবিলের কপালে ঠেকে গেল-'সাপের কামড়ে মরব একদিন ।” সুখময়ী আপসোসের আওয়াজ করল। চুকচুক, “বালাই ষাট। কিন্তু কী করি, তেনা যে ফিরে এল গে৷ ” 'একবার জানান দিয়ে তো যেতে পারতে, সবাই ঘুমুলে পর ? ঘুরাঘুটি আাধারে একটা মানুষ হঁা করে-” “ঘুমিয়ে পড়লাম যে ! ওনার সাথে ঝগড়া করে কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়লাম।” “ঝগড়া হল ? বেশ, বেশ ! তা ঝগড়াটা হল কী নিয়ে ?” “সোয়ামির সাথে মেয়েমানুষের আবার কী নিয়ে ছগড়া হয় ? শাড়ি গয়না নিয়ে ।” সুবল হঠাৎ উত্তেজিত, উৎসুক হয়ে বলল, “তুমি যত শাড়ি গয়না চাও-' 'ইস ? ফতুর হয়ে যাবেন!’ ছায়ায় চাপা আলো লেগে সুখময়ীর পান খাওয়া দাতের ঘষামাজ অংশগুলিতে ভোতা ঝকমকি খেলে গেল - ‘ফতুর নয় হলে। মোর তরে ফতুর হতেই তো চাইছ তুমি হাজারবার। কিন্তু শাউড়ি সোয়ামি যখন শুধোবে মোকে, আ বেী, শাড়ী গয়না। 8 SR