পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী সেই আলোতে জলজল করে উঠল। সুবল কথাটি বলে না। উসখুসি করে আর এ পা থেকে ও পায়ে ভর দিয়ে দাড়ায় । ‘দেশ গা ছেড়ে দূর দেশে পালিয়ে যাই, দেশে কেউ মোদের চিনবে না। সব বালাই চুকিয়ে দুজনে ঘর-কন্না করি।” “ত হয় না। সুখময়ী । চাদিকে বড় নিন্দে হবে, আর ফেরা যাবে না।” ‘কে ফিরছে হেথা ? জমি-জায়গাৎসব বেচে দিয়ে আমায় নিয়ে পাল্লাবে। মোদের ফিরবার দরকার ” “মোক্তারি করে দুটো পয়সা পাচ্ছি—” এখানে গাছের ছায়াতে গুমোটে গরম, সুবলের কপাল ঘোমে চোখে এসে পড়তে চায়। আঙুল দিয়ে সে কপালের ঘাম মুছে মুছে ঝেড়ে ফেলতে থাকে । সুখময়ীর ভিজে চেহারায় ঘাম টের পাওয়া যায় না। আগ্ৰহ উত্তেজনা ফুরিয়ে গিয়ে সে শান্ত হয়ে গেছে। ঝুকে কাপড় তুলে সে একবার হাঁটুর কাছে চুলকে নিল, সোজা হয়ে হাঁটু চুলকানো আঙলেরি একটার ডগা কামড়ে ধরল। ঘাড় "তার কাত হয়ে গেল ভাবনায় । কলসীর কানা ধরে তুলতে গিয়ে সে আবার ঘুরে দাঁড়াল। সুখময়ীর রাগ হয়েছে। কলসী ছেড়ে পাক দিয়ে সোজা হয়ে মাথা তুলে দাঁড়ানোর ভঙ্গিটা তার ফোস কবে ফণা তুলে সাপের কামড়ে দিতে চাওয়ার মতো। কি মিষ্টি হাসিই সুখময়ী হাসল। আড়ি চোখে চেয়ে চেয়ে দ্বিধা-সঙ্কোচের ভঙ্গি করে হঠাৎ এগিয়ে গিয়ে বুক দিয়ে সে সুবলকে গাছের সঙ্গে চেপে ধরল, মুখ উঁচু করল, সুবলের মুখের কাছে কিন্তু পৌছল না। গাছে পিঠ দিয়ে সুবল তখন কাঠ হয়ে 62|6छ । “মোর চেয়ে তোমার মোক্তারি বড় হল ?” “কত কষ্টে পাশার করেছি, দুটো পয়সা পাচ্ছি-? সুখময়ী এতক্ষণে দুহাতে তার গলা জড়িয়ে ধরেছে। সুবল নরম হয়ে আসছে। একটি হাত তার সুখময়ীর পিঠে আশ্রয় খুঁজে বেড়াচ্ছে। “তুমি না। ফতুর হতে পার আমার জন্যে ? ঘর বাড়ি জমি জায়গা বেচে ঢের টাকা পাবে, ব্যবসা করে রাজা হয়ে যাবে তুমি!! রানীর মতো খাটে শুয়ে আমি হাই তুলবাে, আর চাকরাণী মাগীগুলোকে হুকুম করব। চানের ঘরে তুমি আমার চান দেখবে-সত্যি দেখাব, দিব্যি গালছি।” 8 SS