পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রোমান্স নিতাই নেহাৎ বদরাগী মানুষ, সে শুধু জিজ্ঞেস করল, “বৌ-ঝির হাত ধরে টানা কেন মোক্তারবাবু?” সুবল রেগে বলল, “তোর তো বড় বড় হয়েছে নিতাই, যা মুখে আসে তাই বলিস !’ শশধর মৃদুভাবে সাবধান করে দিল, “আর যেন এসব না ঘটে মোক্তারবাবু।” । সুবল আর কথা না বলে হনহন করে এগিয়ে গেল। মুখখানা তার একটু ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে। সুখময়ী ফুরিয়ে গেল, চিরতরে সরে গেল তার জীবন থেকে। একটু কলঙ্ক তার রাটবে—কিন্তু তীব্ৰ অস্বীকারের জোরে সে তা উড়িয়ে দিতে পারবে। কিন্তু আবার যদি এমন কিছু ঘটে, দুর্নাম তার জোর পাবে। বড় একটা মামলা ছিল সুবলের এ-সময়, মনটা একেবারে খি চড়ে গেল ! নাঃ, মনটা একটু শক্ত করতে হবে তার। সবে প্র্যাকটিস জমছে। বাকী দিনটুকুতে ছোট মহকুমা সহরের চারিদিকে যে তাদের নামে টি-টি পড়ে গেছে, সেটা সুখময়ী টের পেল সন্ধ্যার পর নটবরের হাতে বাখ্যারি খেয়ে । বাকী দিনটা বাড়ির সকলে মুখ ভার করে থেকেছে, তাকে বাদ দিয়ে করেছে জটিল। বিকেলে আডিডা দিতে বেরিয়ে সন্ধ্যার পর মুখ অন্ধকার করে নটবর ফিরে এল, গর্জাতে গর্জাতে মা আর ভাইকে জানিয়ে দিল সহরিশুদ্ধ লোক কী বলাবলি করছে এবং খবরটা ভালো করে শুনবার আগ্রহে সুখময়ী কাছে এসে দাড়াতে সরু একটা বাখ্যারি তুলে তার পিঠে কয়েক ঘা বসিয়ে দিল । সরু বাখ্যারির বেতের মতো ধার, পিঠ কেটে রক্ত বেরিয়ে গেল সুখময়ীর । কিন্তু সে তীব্র ব্যথা তার কাছে অতিরিক্ত ঝাল-খাওয়া সুখের মতো লাগল। কলংক তবে রটেছে! তবে আর এখন কী বাধা রইল সুবলের তাকে নিয়ে পালিয়ে যাবার ? এ বদনাম সয়ে সে তো টিকতে পারবে না। এখানে। যেতে হলে তাকে সঙ্গে নিয়ে যাবে না কেন ? নটবরের মা বলল, “থাক, থাক। মারধোর করে কােজ নেই। ও-বেীকে তো আর ঘরে রাখা যাবে না। কাল সকালে খেদিয়ে দিস। মামার বাড়ি যাক, নয়তো চুলোয় যাক।” শুনে একটু ভাবনা হল সুখময়ীর। সত্যি তাকে তাড়িয়ে দেবে নাকি ? গালাগালির জন্য সে তৈরী হয়েই ছিল, তার উপর নয় কিছু মারধোর হয়েছে। কিন্তু খেদিয়ে দিলে তো মুস্কিল! সুবলের যদি বেশি রকম রাগ হয়ে থাকে, তাকে যদি সঙ্গে নিয়ে যেতে না - চায় ! পুরুষের মন তো, বিগড়ে যেতে কতক্ষণ ! তৰে SS a'(t)