পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী নির্মলেন্দু হাসিমুখে বলে, “নন্তকে আমার মিলে ঢুকিয়ে দেব মাসী। নলিনীর বিয়ে দেব। ধীরেনের সঙ্গে ।” মাসী ও পিসী শুকনো মুখে হাসির জবাবে কোনো রকমে হাসে। মুখের হাসি নিভে অনেকের মুখ শুকনো হয়ে যায়। সবাই ভাবে, এখন এক খেয়ালে আছে, খেয়াল বদলাক, হৃদয় মন উজাড় করে স্নেহ ঢেলে মন ভিজিয়ে সময় মতো আবদার ধরে প্রার্থনা মেটাতে হবে। পিসীমার প্রকাশ্য অনুরোধটি কেবল সে রক্ষা করে, নিজে তাকে কালীঘাটে নিয়ে যায়। পিসীমার ভণিতাটিই সকলের চেয়ে আর্টিস্টিক। মন্দিরের প্রাঙ্গণে। সে দাড়িয়ে থাকে, তার সামনে জলে ভেজা কুচকুচে কালো শিশু জীবকে হাড়িকাঠে ফেলে সামনের পা ঘেষে কোপ দিয়ে বলি দেওয়া হয়, অদূরে গেটের ধারে মাংস বিক্ৰী করে, মাংসের কাছে নেতিয়ে পড়ে থাকে কালে চামড়াটি, পালিশ করা কালো জুতোর মতো চকচকে। বাইরে রাস্তার ধারে আটচালায় একপাল পাঠা নজরে পড়েছিল মনে পড়ে যায় । পশুর চামড়া মানুষের কাজে লাগে । ট্যান করা চামড়া । এক মুকুতে নিক্রিয় ভােব কেটে গিয়ে নির্মলেন্দু মাটির সহরে ফিরে যাবার জোরালো তাগিদ অনুভব করে। তার জেলায় পশুর অভাব নেই। ট্যানিং-এর একটা কারখানা তো করা চলে অনায়াসে, রাজগঞ্জের উত্তরে ঝিলের ধারে যে প্ৰকাণ্ড জমি খালি পড়ে আছে, সেইখানে ? পরামর্শ-দানেচ্ছর বলে, “আজকেই ফিরে যাবে কেন ? একৃসপার্টদের সঙ্গে পরামর্শ করে আগে একটা প্ল্যান ঠিক করে নাও ? ট্যানিং-এর প্রসেস জানা লোকও দেখে শুনে ঠিক করতে হবে তো ?’ নির্মলেন্দু জবাব দেয়, সবাইকে পাওয়া যাবে। একটা বিজ্ঞাপন দিলে দলে দলে ছুটিবে সেখানে।” মাধবী বলে, “দুতিন সপ্তাহ থাকবেন বলেছিলেন যে ? কদিন পরে দেখা হল, থেকে যান না। কটা দিন ? আনাখামারের বাড়ীতে নির্মলেন্দুর ঘরের কাছেই একটি একক নারকেল গাছ দাড়িয়ে থাকে। জানাল দিয়ে দেখা যায়। ঝড়ের সময় একদিকে পাতা বাড়িয়ে বঁকা হয়ে দাড়ানোর ভঙ্গি দেখতে ভালো-লাগা কেমন অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল ! রবীন্দ্রনাথের অনুশাসনে মধ্যযুগের সংস্কৃতিকে শৈশব স্মৃতি দিয়ে অনুভব করার মতো গৌরব বোধ হত। গাড়ির গতিবেগের হাওয়া মাধবীর কাধের আঁচল আর 8RV)