পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী আঙুল বুলিয়ে মাথায় ঠেকায়। নির্মলেন্দু হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এ সমস্তই অভিনয় । কিন্তু কার ক্ষমতা আছে। এ অভিনয়কে অগ্রাহ করার ? গরুর গাড়ি ধীরে ধীরে আরও কাছে এগিয়ে আসে। মাধবী উঠে দাড়ালে নির্মলেন্দু বলে, “একটু পাশের দিকে সরে দাড়াও, গাড়িটা ব্যাক করি।” সঙ্গীসার্থীরা বাড়ীতে জমা হয়ে অপেক্ষা করছিল, সে ফেরামাত্ৰ সকলে কোলাহল করে। উঠল। 'কোথায় ছিলে এতক্ষণ ? আজকেই নাকি ফিরে যাবে? আজ ষেও না। একটা রাত, শুধু আজকের রাতটা, একটু আনন্দ করি এসো।” \ নির্মলেন্দু বলল, “আনন্দ করব, গাড়িতে।” এক-একজন, এক-একটি কাজের ভার নিয়ে চলে যায়। স্ত্রীলোক সংগ্ৰহ করতে কেউ, কেউ পানীয়, কেউ খাদ্য । গাড়ি ছাড়ার আধঘণ্টা আগে কামরা জুড়ে বসে শুধু উত্তেজনায় তাদের নেশা হয়েছে মনে হয়, স্ত্রীলোক তিনটি থেকে থেকে অকারণে খিলখিল করে হেসে ওঠে। নতুনত্ব এই, এই তো অ্যাডভেঞ্চার। ছোটবাবু ছাড কার মাথায় এ বুদ্ধি আসত ? এদিকে আত্মীয়তা দাবী করে নির্মলেন্দুকে স্টেশনে পৌছে দেবার অধিকার। গাড়ি স্টেশনে যাবে, গাডি ফিরে আসবে, কাউকে সঙ্গে নিতে নির্মলেন্দুর আপত্তি কেন ? আপনজন কি তার কেউ নেই যে বাড়ি থেকেই সে যাত্রা করবে এক ? সে সিনিক নয়, মমতা আর খাতির দুই-ই তাকে সমান মুগ্ধ করে, কিন্তু এ নেকামি কি সহ্য হয় মানুষের ? প্ৰচণ্ড ধমকে গুরুজনের স্তব্ধ হয়ে যায়। ঠিক, নির্মলেন্দুর বাপও এমনি ছিল। ভাব করতে গেলে এমনিভাবে সে খোঁকিয়ে উঠত। একজন শুধু মিইয়ে মিইয়ে কঁাদে, পাঁচ বছরের ছোট বোন। মা নিষেধ করেন, “যাওয়ার সময় চোখের জল ফেলিস নে খুকী।’ খুকীর কাছে নির্মলেন্দু বিদায় নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে। কোলে তুলে নিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে খুকী বলে, “আমার পিয়ানো কই-ছোট পিয়ানো ?” ধীরেন বলল, ‘চারদিকে গোলমাল চলছে, তুমি কি বলে হঠাৎ কলকাতা চলে গেলে ? একটা চেক পৰ্যন্ত সই করে রেখে যাওনি।” নির্মলেন্দু বলল, “আর গোলমাল হবে না । এবার আমি সব ভার নিলাম । আমি এক মিল চালাব ।” • “আমরা কী করব ? 8&r