পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধনজন যৌবন ‘কাজ করবে, মাইনে পাবে। দেড়শো টাকা এলাউন্স পাচ্ছি, মাইনে পাবে একশো। যদি পোষাবে না মনে কর, তোমায় আমি জোর করে আটকাব न। डांछे ।' ‘তার মানে তোমার চাকর হয়ে থাকতে হবে ? নির্মলেন্দু লোেহাটে হাসি হেসে বলল, 'চাকর কেন, কর্মচারী। তাও শুধু অফিস টাইমে। অন্য সময়ে যেমন বন্ধু আছ তেমনি থাকবে। তাছাড়া, সামনের মাসে নলিনীকে বিয়ে করে আত্মীয় হয়ে যাবে। বিয়ের পর মাইনে বাড়িয়ে দেড়শো করে দেব ।” হুকুমের পর হুকুম জারি হতে থাকে, কেউ বরখাস্ত হয়, কেউ গালাগালি খেয়ে আরেকবার সুযোগ পায়, কর্মচারীর বেতন আর মজুরের মজুরী চলতি হারে নেমে যায়, অত্যাচারের যে ক্ষমতা অফিসারদের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল সেটা তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়, বাড়তি সুবিধা বাতিল হয়ে ষায়, চুপিচুপি নির্মলেন্দুকে খবর জানাবার স্পাই গজিয়ে ওঠে কয়েকজন। মিলের কাঠের গেটের স্থানে লোহার গেট বসে, গোট বন্ধ করবার আর খুলবার সময় লোহার শিকল ঝনঝনি করে বেজে ওঠে । গোড়ার দিকে একবার শুধু কয়েকটি গোয়ার হাঙ্গামা বাধাবার চেষ্টা করে ; গেটের সামনে দাড়িয়ে সামনা-সামনি নির্মলেন্দুর সঙ্গে কথা বলবার দাবী জানিয়ে তার হল্লা শুরু করে এবং পুলিশ এসে কয়েকজনের মাথা ফাটিয়ে দিয়ে যায়। রাঘবের যে অপরাধ আগেই ক্ষমা করা হয়েছিল, এতদিন পরে সেই-অপরাধে ছমাসের জন্য তাকে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারপর একদিন নির্মলেন্দু রাজগঞ্জের উত্তরে ঝিলের ধারে তার নতুন কারখানা দেখতে যায়। দ্রুত গতিতে ট্যানিং এর কারখানার অনেকগুলি ঘর উঠেছে, কাজ আরম্ভ হয়ে গেছে। এখনো কয়েকটি ঘর তোলা হচ্ছে। বর্ষার পরে এখন শরৎকাল । শ্বেত পদ্মের পাতা আর ফুলে বিলের জল চোখে পড়ে না । কেবল কারখানার দিকে তীরের কাছে ফুল আর পাতা সাফ করে ফেলা হয়েছে। আগে এই বিলের ধারে দাড়ালে পদ্মের ঘন গন্ধে মোহ জাগত। আজ এলোমেলো বাতাস শুধু দুৰ্গন্ধ এনে দেয়। ঘরের কোথাও ইদুর পচলে এরকম গন্ধ হয় । সুগন্ধি সিস্কের রুমাল নাকে চেপে ধরে নির্মলেন্দু গ্রামের দিকে চলতে থাকে। 3S