পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুখে ভাত শশধর ঘোষের বড় মেয়ে শ্ৰীমতী বেলারানীর প্রথম ছেলের মুখে ভাত দেওয়া হবে। ভোজ রান্নার জন্য গগন ঠাকুরকে ডেকে পাঠান হল। একবার, দুবার, তিনবার। আসব ব’লেও গগন আর আসে না। শশধর উদ্বিগ্ন হলেন। বেলারানীর ক্রোধের সীমা রইল না। “ওর পায়া ভারি হয়েছে বাবা । নটবরকেই ডেকে পাঠাও না ?” “আজকের দিনটা দেখি। কাল তাই ডাকবা।” বলে শশধর মোটরে চেপে আপিস গেলেন । - উড়িয়া ঠাকুর নটবরের সঙ্গে গগনের পার্থক্য অবশ্য অনেকখানি, নইলে আর এভাবে বার বার ডেকে পাঠিয়ে অপেক্ষা করা কেন। গগনকে ভার দিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। কত লোক খাবে আর কি খাবে বলে দিলেই গগন ফর্দ ঠিক করে দেয়া হিসাবে তার কখনো ভুল হয় না। জিনিস কম পড়ার বিপদ আর অপচয়ের আপসোস, কোনোটাই সে ঘটতে দেয় না। রান্না গগনের খারাপ হয়েছে এমন কথা কোনোদিন কারো মুখে শোনা যায় নি। মধ্যাহ্নের নিমন্ত্রিতদের বেলা পাঁচটায় আসনে বসানো তার স্বভাব নয়। থাকে। সে পরিচ্ছন্ন, কাজও করে পরিষ্কার। রান্নাঘরেই হোক আর অস্থায়ী চালার নিচেই হোক, তার রান্না করা দেখে অত্যন্ত যে খুতখুতে মানুষ তারও খিদে কমে যাবার ভয় থাকে না। তাছাড়া, মানুষটা সে জানাশোনা । কয়েক মাস সে এ বাড়ীতে কাজ করেছে। বেলারানীর বিয়ে হল পৌষের শেষে, তার আগের শ্রাবণের শেষে গগন চাকরি করতে এল নটাকা বেতনে। শ্রাবণের পর ভাদ্র, ভাদ্র মাসে বিয়ে পৈতে কোন শুভকর্ম হয় না। পেশাদার ঠিকে বামুনরা কারো বাড়িতে যদি বাধা কাজ করে তো করে বছরের ওই একটি মাস, বসে থাকার বদলে থাকা খাওয়া আর বেতন পাওয়া যায়, অন্য সময় এ কাজ তাদের পোষায় না। আশ্বিন মাস শুরু হতে না হতে ডাক আসতে লাগল নানা জায়গা থেকে, গগন কিন্তু কাজ ছাড়ল না। যে বৌ নেই তাকে মেরে, যে ছেলে কস্মিনকালে ছিল না তার অসুখ ঘটিয়ে এবং আরও কয়েকটা মিথ্যাচুতোয় ছুটি নিয়ে মাঝে মাঝে দু'এক জায়গায় রোধে এসে সামান্য যে উপরি রোজগার হল তাতেই সে যেন খুশি হয়ে রইল। বিদায় সে হল বেলারানীর 8\3>