পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী কোনোরকম পরিচয়ের ভূমিকা ছাড়াই তাই একেবারে হাসাহাসি শুরু হয়ে গেছে। নাকটি একটু বোচা খোকনের, ডগা বলা চলে এমন কিছু নেই। চোখের বাইরের কোণে স্পষ্ট ভঁাজ আর রেখা আছে। কানের পাতা দুটি মাথার সঙ্গে লেপটান। মনে হয় যেন আঠা দিয়ে এটে দেওয়া হয়েছে, আপনা থেকে গজায় নি । বেলার মা বললেন, “আট মাসে জন্মানো ছেলে। বলতে নেই, ছেলে দেখে সবাই তো অবাক। ডাক্তার বললে, হিসেবে ভুল হয়েছে, এ ছেলে দশ মাসের। কি কথা মুখপোড়া ডাক্তারের ! মেয়ের আমার বিয়ে হল দশ না এগার afix{----" শশধর এসে পড়েছিলেন । i “আচ্ছা, আচ্ছা । ওসব কথা থাক । কাগজ কলম আনো দিকি, ফর্দটা করে ফেলি । খোকাকে গগন তাড়াতাড়ি কোল থেকে মেঝেতে বসিয়ে দিল, অস্পৃশ্যকে বর্জন করার মতো । ঠোঁট ফুলিয়ে খোকা করল কঁদবার উপক্রম। খোকার চিবুকের মাঝামাঝি একটু খাদের মতো আছে। পায়ের দু-নম্বর আঙ্গুল দুটিও কি একটু খাপছাড়া রকমের বড় নয় খোকার ? “কি ষে তুমি কর গগন ! কোল থেকে ছেলে নিলে, কোলে তা দিতে পারতে ? মাটিতে নামালে কোন বিবেচনায় ?” বেলার মা তাড়াতাড়ি নাতনিকে কোলে তুলে নিলেন। আডিডা-বাসায় সে রাত্রে তাস খেলা জমল না । পিছন দেখে চিনতে পারা যায় এমন রঙচটা দাগ লাগা তাস, তাই নিয়ে খেলতে খেলতে দুদিন আগেও পঞ্চর সঙ্গে গগনের হাতাহাতি হয়ে গেছে। আজ সাড়ে পাচ আনা হেরে যাবার পর কানাই সন্ধিগ্ধ হয়ে বললে, “ব্যাটার লেগে মন কঁদে নাকি রে গগন ? তা কি করবি বল, এ্যারে কয় কপাল । তোর ব্যাটা বাপ বলবে অন্যকে ৷” গুমা খাওয়া গগন বললে, “খুক। ছুতে ঘেন্না করে, মন কঁদবে। আগে জানলে কি কোলে নিতাম ? আমার হােক, যার হােক, বেজন্মা বটে তো। বামুনের ছেলে, ঘেয়ে কুত্তার গা চাটবে তো বেজাৰ্ম্মীর ছায়া মাড়াবে না । শাস্তরে আছে।” । জীবনে প্ৰথম আসল রক্তে খাটি আগুন ধরে যাওয়ায় গগন স্তম্ভিত হয়ে গেছে। বিয়ের আগে তার রক্তকে বেলারানী যেন শুধু দাহ পদার্থে পরিণত 8\8