পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুখে ভাত “ঘুপচি টুপচি যেখানে দেবার দাও দিদিমণি, শোব। কিন্তু আমি একলাটি। কেউ থাকবে না। সেথা।” চাপা গলায় গগনের কথা বলার ভঙ্গিটা আবেদনের নয়। দুনম্বর অতি তুচ্ছ বেয়াদপিতেই বেলারানী রাগ করবে ঠিক করে রেখেছিল। হাসি পাওয়ায় ইচ্ছা থাকলেও রাগ দেখাতে পারল না । “তুমি তো বড় নবাব হয়েছ গগন ?” “রান্না ঘরে, ভাড়ার ঘরে-” “কোথাও খালি নেই। কিষণলাল আর মেজমামার চাকরিটী বাইরের ঘরে শোবে সেইখানে শোওগে ।” রাত্রি আরও গভীর হয়ে এলে বেলারানী যখন সংকোচ জয় করে ঘরে গিয়ে দরজা দেবে ভাবছে, গগন সিড়ির মাথায় পাকড়াও করল। “আমি ছাতে গিয়ে শুলাম দিদিমণি ৷” “হিমের মধ্যে ছাতে শোবে ?” “ছাত ফাকা হবে। কেউ যাবে না।” ঘরের মধ্যেই চাদর গায়ে দিলে আরাম বোধ হয়, খোলা ছাতে বেশ ঠাণ্ড । কুয়াশায় রাস্তার আলোগুলি আবছা হয়ে গেছে। সতরঞ্চি বিছিয়ে বসে বসে একঘণ্টা গগন বিড়ি টানল। মাঝরাত্রি এতক্ষণে পার হয়ে গেছে। নিচে থেকে আর মানুষের গলা কানে আসে না । এইবার বেলারানীর আসার সময় হয়েছে। যে কোন মুহুর্তে সে আসতে পারে। তাড়াতাড়ি আসাই ভালো, রাত তিনটের সময় বাড়ীর মানুষেরা আজ হয়তো আবার জাগতে আরম্ভ করবে। আধঘণ্টা পরে গগন একবার নিচে থেকে ঘুরে এল। নিচের বারান্দায় এখনো কয়েকজন অনুগ্রহপ্রার্থনী বিধবা তরকারি কুটছে, ঘুমে ও শ্রান্তিতে তাদের কথা নাই। দোতলায় বেলারানীর ঘরের দরজা বন্ধ । এবার সতরঞ্চিতে শুয়ে গগন বিড়ি টানতে লাগল। উনানের আঁচ সয়ে সয়ে গায়ের চামড়া বোধহয় বিগড়ে গেছে, সামান্য ঠাণ্ডাতেই বড় কষ্ট হতে লাগল। জর এসে শীত করার মতো ! রাত জেগে ঘুমিয়েছে বেলারানী, তবু সে উঠল খুব ভোরেই। বাড়ীর প্রায় সকলেই অবশ্য তখন উঠে পড়েছে। সিড়ি দিয়ে বেলারানী নিচে নামতে না নামতে কোথা থেকে গগন এসে দাড়াল । 8vo)