পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

CO অথচ আদুরে মেয়ে সে নয়। সে প্রথম এবং বড় বটে কিন্তু অনেকগুলির বড় । ভাইবোনের বন্যায়। তার অতিরিক্ত আদরের দাবি গোড়ার দিকেই ভেসে গেছে । নীরদ তাকে কোনোদিন বেশি প্রশ্ৰয় দেয় নি, নির্ভরশীলতা যদি প্ৰশ্ৰয় না হয় । প্ৰধান সেবিকা বলে বরং শাস্তি ও শাসনটাই বাপের কাছে সে পেয়েছে বেশি। তবে পরিচয়টা তাদের হয়েছে গভীর। মুখের ভাবের একটা ভিন্ন ভাষা স্বষ্টি হয়ে গেছে দুজনের অনৈত্যিক সহানুভূতিতে। চারুর চোখ ভেজা দেখলে নীরদ তাকে আদর দিয়ে ভোলায় না, কিন্তু জিজ্ঞাসা করে, “কি হয়েছে রে ?” চারু তখন কঁদে না, অভিমানের জের টানে না। কিন্তু বলে, ”কাপড় নেই। মা বকেছে। বাবা ।” নীরদ সত্যিই রাগ করে। বলে, “কাপড় নেই ! এই না সেদিন একজোড়া কাপড় কিনে দিলাম তোকে, দুমাসও হয় নি। অত কাপড় দিতে পারব না তোমাকে । অতি নবাব’কন্যা হলে চলবে না তোমার।” খানিকক্ষণ একদৃষ্টি মেয়ের মুখখান দেখে আবার সজোরে মন্তব্য করে, “লক্ষ্মীছাড়া মেয়ে ।” কিন্তু কাপড় চারু পায় ! ছুটির দিন সেবার প্রয়োজন ছাড়াই কাছাকাছি একটু এদিক ওদিক নড়ে চড়ে বেড়ালেই নীরদ তাকে সঙ্গে করে কাপড়ের দোকানে নিয়ে যায় । কাপড় পছন্দ করে চাৰু নিজেই দাম জিজ্ঞাসা করে। দাম শুনে বলে, বাবা । সন্তা দেখে দিন ।” নীরদ বলে, ‘নে’নে, ওটাই নিয়ে নে। জ্বালাস নে আর ' স্কুলের পরীক্ষাগুলি চারু এমনিই পাশ করে এসেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাটা পাশ করিয়ে দেবার জন্য শেষ বছর একজন মাষ্টার রাখা হল । অনুরূপ বলেছিল, ‘সম্বন্ধ খুজে বিয়ে দিয়ে দিলে হয়। বোকা হাবা মেয়ে যদি না পাশ করতে পারে ?” নীরদ বলেছিল, “বিয়ে! ওইটুকু মেয়ের বিয়ে কি গো ! পড়ছে, পড়ুক।” অনুরূপ তর্ক করে না, কথা কাটায় না । মেয়ের বিয়ের মতো বড় কথা বলেই সে বলল, “মেয়ে তোমার ওইটুকুই আছে। দুবছর বয়স ছাপিয়ে ভর্তি করেছিলে মনে নেই ? বছর বছর টেনে হিঁচড়ে ক্লাশে উঠেছে। কি হবে ওকে পড়িয়ে ?” তার পরেই চারুকে তালিম দেবার জন্য লোকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জগত ছেলেটি ভালো । কারণ, সে গরীব এবং নিজের চেষ্টায় অনেক কষ্ট সহ করে পড়াশোনা চালিয়ে এলেও বরাবর ভালো রেজালট করে এসেছে। 38V