পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দিশেহারা হরিণী মৃগময়নার চােখ দুটি সত্যসত্যই হরিণীর চােখের মতো। মানুষের অবিকল হরিণীর মতো চোখ থাকলে অবশ্য অকথ্য রকমের বিশ্ৰী দেখায়। কিন্তু ওটা তুলনা মাত্র ; কোনো মেয়ের যদি বড়, টানা, সদাচকিত অথচ ধীর ও গভীর দৃষ্টিওয়ালা চােখ থাকে এবং চােখ দুটি দেখে হরিণীর চােখ মনে পড়িয়ে দেয়, निरे মেয়েটিকে মুগনয়না বলা যায়। মুগনয়নার মনটি বড় কোমল। বিশেষ এ ধরনের সরলতা তার আছে, তার নিজস্ব সত্যপালন নীতির সঙ্গে জড়ােজড়ি করে আছে। একটু খাপছাড়া তার স্বভাব, কিন্তু অগোছাল নয়, চোদ পনের বছরেই তার চপলতা উপে গেছে, কিন্তু কোনাে ভারেই তাকে ভারাক্রান্ত মনে হয় না। শান্ত রেশালো নৃত্যছন্দের গতিতে তার চলাফের নড়াচড়ার অন্ত নেই, মুখে মৃদু একটু হাসির সঙ্গে মিষ্টি সুরে সব কথাতেই কথা বলে যায়। এখন, মোটে সতর ঐ বছর বয়সে যৌবনকে নিয়ে কি করতে হয় সে যেন জানে, দেহ যতই উথলে উঠক মনে নির্মল স্বচ্ছ রসের মতো জীবনের উত্তাপ শুধু আস্তে আস্তে - ফোটে। ছাতের শান্ত জ্যোৎস্নায় এক সে আনন্দে পূর্ণ হয়ে যায়, মনে হয় জন্ম থেকে বড়লোকের আদুরে মেয়ের মতো সে ভগবানের আদুরে মেয়ে হয়ে আছে, কোনো অভাব তার নেই, কোনো ভাবনা নেই। আবেগ অদম্য হলে হাঁটু পেতে বসে হাতে মাথা ঠেকিয়ে সে অনেকক্ষণ ভগবানকে প্ৰণাম করে, ভক্তি আর ভালোবাসার কত মানুষ যে বিরাট মহান রূপ নিয়ে চোখের সামনে দিয়ে ভেসে যায়,-তার দাদার ‘একবছরের শিশুটি পর্যন্ত আকাশ পাতাল জুড়ে কোমল চামড়ার দুতিতে চারিদিক নীলাভ করে তোলে, দুটি দাঁতের ফোকলা মুখে তার দিকে চেয়ে শুধু হাসে। এই অবস্থায় বাড়ির লোকে তাকে মাঝে মাঝে আবিষ্কার করে। ডাকলেই সে ধীরে ধীরে উঠে বসে বলে, “মাগো, কি প্ৰকাণ্ড একটা আগুন আকাশ দিয়ে চলে গেল।” . মা আর মায়ের সম্পকিত মাসি বলেন, “আইবুড়া মেয়ে, এসময় তোর ছাতে উঠবার দরকার।’ ] 88yr