পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মৃতজনে দেহ প্ৰাণ কেউ করে বলে তো শুনি নি।’ তিনবার কথা বলতে গিয়ে প্রমীলা চেপে গেল । তারপর আচমকা বলে ফেলল, “আমাকে হয়তো একবার দেখতে চায় ।” 'তোমাকে ? পাচ ছ বছর চুপ করে থেকে হঠাৎ স্ত্রীর জন্য ভূপতিৰ মাথাব্যথা হবে কেন ?" “মনস্তত্ত্ববিদ ’ বলে প্ৰমীলা হাসল এবং ‘উঃ’ শব্দ কবে উঠে দাঁড়াল। পরাশরের পিছনে দাড়িয়ে তার কঁধে হাতের ভর দিয়ে মাথায় গাল রেখে মৃদুস্বরে বলল, “মন বুঝেও মান রেখে কথা কইতে তুমি আর শিখলে না। আমি জানি তুমি কী ভাবছ—টাকা বাগাবার চেষ্টায় আসছে।” ভাবি নি ঠিক, ওই রকম কিছু আন্দাজ করছিলাম। তবে একটা খটকা লাগছে, এতদিন চুপ করে রইল কেন ?” ‘সাহস পায় নি হয়তো। তুমি যে স্পষ্ট বলে দিলে একটু গোলমাল করলেই খুন করে ফাসি যাবে। মেয়েমানুষ নিয়ে জগতে ঢের খুনটুন হয়ে গেছে জানে তো । তোমাকেও জানে ছেলেবেলা থেকে, কী রকম মাথা খারাপ তোমার । তারপর মানুষটা, যা ভীরু। তুমি যে শুধু ভয় দেখিয়ে—” “ভয় দেখাই নি । এসে যদি গোলমাল করে সত্যি খুন করব।” 'না । সত্যি বলছি ভালো হবে না। যদি মাথা গরম কর । দরকার হলে মারধোর করে তাড়িয়ে দাও, সে আলাদা কথা। ওর জন্যে তুমি বিপদে পড়বে, মাথা খারাপ নাকি তোমার ?” প্ৰমীলা ফিরে এসে চেয়ারে বসল। শুকনো বাতাস দুজনেরি মুখের তৈলাভ লাবণ্য শুষে নিয়েছে, পরিবর্তনহীন স্থায়িত্বের মধ্যে এই মৃদু রুক্ষতার কারণটা আতিশয় প্রত্যক্ষ। মুখ দেখে দুজনের দুর্ভাবনার ঠিক মতো হদিস পাওয়া কঠিন । মনের আলোড়ন আড়াল করে রেখে সহজ হয়ে থাকবার চেষ্টাই বরং প্রতিমুহূর্তে ধরা পড়েছে। দুচোখে প্রশ্ন নিয়ে একজন আরেকজনকে নিরীক্ষণ করছে, অপরের মধ্যে শুধু ভাবনা অথবা ভয় জানিবার ইচ্ছায়। জিভা দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে পরাশর বলল, “টাকার জন্য নাও হতে পারে, মিলু।” 'কী। তবে ?” প্ৰমীলাও দেখাদেখি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাতে লাগল। ‘কোন রকম প্ৰতিশোধ নিতে হয়তো আসছে।” “প্ৰতিশোধ নিবে ? ও? ঈষৎ বিবৰ্ণ মুখখানা প্ৰমীলার আন্তরিক অবজ্ঞা ও தி 8.