পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী আছে কেউ আমায় জানায় নি। তবু আমিই দোষী। জেল থেকে বেরিয়ে অক্ষয় ভাবাবে কি না বলে যে সরকার মশায় থাকতে তার এই সর্বনাশ হল ?” ‘তা ঠিক । দেখি কি করতে পারি।” স্টেশনে ভিড় করেছিল একদল নরনারী যাদের দেখলেই মরণাপন্ন গাছের কথা মনে পড়ে যায়। মাধব তাদের জন্য কলকাতা থেকে চাল ডাল আটা ময়দা নিয়ে আসছে খবর শুনে তারা স্টেশনে ছুটে এসেছে। না, ঠিক ছুটে তারা আসে নি, ধীরে ধীরে হেঁটেই এসেছে। বাঙ্গাতলা থেকে স্টেশন মােটে তিন মাইল পথ, দশ পনের মাইল হলেও তারা আসত। কারণ, দান এগিয়ে গিয়ে সবার আগে নিতে হয়, নইলে ফুরিয়ে যায়। জগতে চিরকাল চাওয়ার তুলনায় দান কম পড়ে এসেছে, সবার আগে হাত পাতিবার প্রয়োজনটা তাই সবাই জানে । বেলা তিনটের গাড়ি পৌছল। সন্ধ্যা সাতটায়। স্টেশনের গ্রাম্যতা তখন অন্ধকারের রূপ নিচ্ছে। লোক দেখে মাধব প্ৰথমে ভেবেছিল, সরকার মশায আসবে শুনে সবাই বুঝি তাকে অভ্যর্থনা করতে এসে ভিড় জমিয়েছে, তারপর আসল ব্যাপার টের পেয়ে তার বেশ একটু উল্লাস ও গুরুত্ববোধ জাগল। কারণ যাই থাক, তারই প্ৰতীক্ষায় এতগুলি লোক জমা হয়েছে। এ চিন্তা মানুষকে উল্লাস দেবেই, নয়তো কোনো চাপরাসী কোনোদিন খাতির পেয়ে খুশি হত না । গুরুত্ববোধ জাগল দায়িত্বের হদিস পেয়ে । এদের প্রত্যাশা যে কত অধীর এই ভিড তার প্রমাণ । তাকে কারবার করতে হবে এদের নিয়েই । মাধবের সঙ্গে শুধু বিছানা আর সুটকেস নামতে দেখে জনতা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ সেই নৈঃশব্দ্য উপলব্ধি করে মাধবের গা ছমছম করতে লাগল। খালি হাতে স্টেশনে নেমে সে যেন হৃদয় মনের এক বিরাট অভিযানকে বিপথে চালিয়ে দিয়েছে; পাক দিয়ে এসে সেটা রক্তমাংসের আক্রমণে পরিণত হয়ে যাওয়া বিচিত্র নয় । হেডমাষ্টার ভূপতি চক্রবর্তী বললেন, “আপনি ওদের একটু বুঝিয়ে বলুন। আমি বলেছিলাম, বিশ্বাস করে নি।” মাধব কি আর করে, দুবার খুক খুক করে কেশে নিয়ে চিৎকার আরম্ভ করল : दळ थांब— সকলে শুনল। সেই ভয়ানক স্তব্ধতা ভেঙে গেল। উন্মুখ ভিক্ষুক বোধ হয় মরে গেলেও আশ্বাসের মন্ত্রে বেঁচে ওঠে। নয়তো পৃথিবীতে এত মানুষ আজও 8 V8