পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যে বঁচায় বেঁচে আছে কেন ? ভিড় যেন সম্বিৎ ফিবে পেয়ে সশব্দ উত্তেজনায় জীবনের গুঞ্জন তুলে গায়ের দিকে রওনা হল । আজি আসেনি। কিন্তু তাদের জন্য অন্ন আসবে। খেতে তারা পাবেই। স্বয়ং ধনঞ্জয় সরকার তাদের সকলকে খাওয়াবেন। স্টেশনে আসা তাদের সার্থক হয়েছে। ঝোপে আর গাছে ছড়ান জোনাকিগুলি যেন টেপ টেপ সংকেতে সায় দিতে লাগিল । স্কুলের ঘরে মাধবের থাকবার ব্যবস্থা হয়েছিল। স্কুল আজ মাস দুই বন্ধ আছে। ছেলে হয় না বলে ধনঞ্জয় পূজোর ছুটি পর্যন্ত স্কুল বন্ধ বাখবাব হুকুম দিয়েছিলেন। স্কুলের লাগাও হেডমাস্টারের বাড়ি, মাধবের জন্য তিনি খাওয়ার আয়োজনটা করেছিলেন ভালোই । হেডমাস্টারের স্ত্রী নিজে পরিবেশন করে তাকে খাওয়ালেন, পান এনে দিল তার মেয়ে । অতিথিকে ঘরের লোক করে নেওয়াটা গ্ৰাম্য ব্যবহার। তবে এক্ষেত্রে সেটা একটু খাতির করায় দাঁড়িয়ে গেল। স্কুলের মাস্টারদের বেতন এক পয়সা বাডান হয়নি, এই দুদিনে তাদের দিন চলে না । এদিকে মাধব ধনঞ্জয়কে একটু বললেই এ অবস্থার প্রতিকার হতে পারে। এটুকু উহা থাকলে ভূপতির বাড়ির পারিবারিক আদর-যত্নে মাধব মুগ্ধ হয়ে যেতে পারত । স্কুলের কেরানি শ্যামল এ বাড়িতেই থাকে। খাওয়াদাওয়ার পর আড়াল থেকে স্বার্থের কথাটা সেই সামনে টেনে আনল। শ্যামলের বয়স ত্ৰিশের নিচে, অজার্ণের চেহারা । বিনিয়ে বিনিয়ে শোকের শোভাযাত্রার মতো কথা বলে । “আমাদের দিকে একটু না তাকালে আমরা আর বঁচি না, মাধববাবু। বাবুরু আপিসের পিয়ন পর্যন্ত রেশন পাচ্ছে, আমরা ইদিকে-” শ্যামল প্ৰায় কখনোই মুখের কথা শেষ করে না। যেটুকু বলা হলে বক্তব্য বােঝা যায় সেইটুকু বলেই সে সার্থক হাসির ভঙ্গিতে নীরবতার জের টানে । মাধব হেসে বলল, “আপনারা তো সুখে আছেন মশায়। ছুটিও ভোগ করছেন, भांशेन्& °Cछ् ।।' ভূপতি বিমৰ্ষভাবে বললেন, “সরকার মশায় হঠাৎ যে কেন স্কুলটা বন্ধ করলেন। প্রায় নব্বইটি ছেলে অ্যাটেণ্ড করছিল-' ‘নব্বই ? বলেন কি সার!' মাধবের পান চিবানো বন্ধ হয়ে গেল । “আজেন্তু হ্যা । আমি নিজে অ্যাটেণ্ডান্স রেজিস্টার দেখে অ্যাভারেজ কষে পাঠিয়েছি। বাবু বুঝি বিশ্বাস করেন নি?” ভূপতি শঙ্কিত ভাবে প্রশ্ন করলেন। 9 (26 Ve o(t)