পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যে বঁচায় সময় প্রত্যেকের পরিবারের খবর তিনি খুটিয়ে খুঁটিয়ে জেনে নেন। কন্যাদায়গ্ৰস্ত কেউ কোনোদিন তঁর কাছে এসে খালি হাতে ফিরে যায় নি। মাধব জানে, ধনঞ্জয়ের এই সদাজাগ্ৰত সহানুভূতি সুর্যের আলোর মতো নির্মল। যুবতী মেয়েদের সম্বন্ধে তার কোন দুর্বলতা নেই, তার সবটুকু সহানুভূতি শুধু যুবতী মেয়ের বাপ ভায়ের জন্য । “অক্ষয়ের বোনটার খবর জানেন মাস্টার মশায় ? নলিনীর ? “সে সদরে আছে ।” 'সদরে নাকি ! শুনছিলাম। একেবারে নিখোজ ?” 'না, সদরে নৃসিংহবাবুর রিলিফ ওয়ার্ক করছে।” ‘বটে’ ? তবে যে শুনলাম নৃসিংহবাবুর ছেলেটার সঙ্গে পালিয়ে গেছে খেতে না পেয়ে ?” “ঠিক পালিয়ে যায় নি, চলে গেছে। বলা হল অনেক, কারো কথা শুনল না। ওর মা তো ‘ওকে গাল দিয়ে কিছু রাখেনি। শিববাবু, ভোলানন্দী এরা সবাই কিছু টাকা সাহায্য দিতে চাইলেন, সরকার মশায়কে বলে সব ঠিক করে দেওয়া হবে জানান হল, ও তা গ্ৰাহা ও করল না । খালি বলতে লাগল, “যান, যান, আপনারা যান।” মাকে ফেলেই চলে গেল।” শেষ কথাটায় মাধব মুচকে হাসতে থাকে। ওটা যেন বলাই বাহুল্য ছিল। শ্যামল বলে, “সে এক কাণ্ড মাধববাবু। মা টেনে হিচড়ে মেয়েকে আটকাতে চায়, মেয়ে টেনে নিয়ে যেতে চায় মাকে । বুড়ী কেন গায়ের জোরে পারবে আমন জোয়ান মেয়ের সঙ্গে ! টানতে টানতে বেলতলা তক নিয়ে গেছল। বুড়ী তখন হাউমাউ করে চেচাতে লাগল। আমরা মেয়েটাকে ধমকে ছাড়িয়ে দিলাম।” ভূপতির মেয়ের মুখখানা বিবৰ্ণ মান দেখাচ্ছিল। তিনবার সে ঘরে এসেছে, গেছে। এসব কথা শুনে সে যেন সইতে পারছে না, থাকতেও পারছে না নাশুনে। হঠাৎ সে বলল, 'নলিনী আমায় চিঠি লিখেছে বাবা। পাচটা টাকা পাঠিয়েছে। ওর মার জন্য ।” ভূপতি আশ্চর্য হয়ে বললেন, “আন তাে চিঠিটা, দেখি কি লিখেছে।” চিঠিখানা প্ৰথমে দেখল মাধব, সে উপস্থিত থাকতে প্ৰথম কিছু করার অধিকার আর কারো থাকতে পারে না। মন্ত লম্বা চিঠি, মনকে ঢেলে দেবার সব চেয়ে 8V