পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিলামসন ষ্টিফেন এফ বিলামসনের মনটা সরল, কেবল বুদ্ধিটা একটু প্যাচালো, জাত বেনের যেমন হয় | দরকার না হলে অকারণে কখনো সে প্যাচ কষে না এবং প্যাচ যাতে গভীর হয়। সে বিষয়ে সাবধান থাকে। মিথ্যাকে সে আমল দেয় না । সাদাকে যদি বা কালো বলে, এমন জোরের সঙ্গে বলে এবং এতখানি তেজ আর আন্তরিকতা থাকে তার বলার মধ্যে, যে লোকে থতিমত খেয়ে ভাবে তারই বোধ হয় ভুল হয়েছে। বিলামসনের সাহস দুর্জয়। যেখানে ভয়ের কিছু নেই, যেখানে প্ৰতিপক্ষ তার চেয়ে দুর্বল, সেখানে সে দুঃসাহসী । শঙ্কার কারণ থাকলে শঙ্কিত না হয়ে সে উদারভাবে সাহস দেখাতে বিরত থাকে, তাতে তার ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা প্ৰমাণিত হয়ে যায়। অন্যায়। সে কখনো করে না, অন্যায় করতে হলে আগে ঈশ্বরের, কতব্যের, মনুষ্যত্বের দোহাই দিয়ে সে বিশ্ব জগতের কাছে ঘোষণা করে নেয় যে সেটা অন্যায় নয়, অতিশয় ন্যায়। সাতান্ন বছর বয়স হয়েছে বিলামসনের। মেহেদি রঙের চুলে সাদার ছোপ ধরেছে। মিসেস বিলামসনের বয়স হবে ছেচল্লিশ, তবে বয়স গোপন করার কৌশল ভদ্রমহিলা এত ভালো জানেন এবং ওই সাধনায় প্রতিদিন এত সময় ব্যয় করেন যে মনে হয় ত্রিশ বছরের যৌবনে যেন ভাটা ধরেনি। তবে জোয়ারের জল প্রাচীর তুলে আটকে দিলে তাতে যেমন শ্যাওলা জন্মায়, জল খারাপ হয়ে পচাপচা দেখায়, মিসেস বিলামসনের রূপও তেমনি হয়ে গেছে। বিশ বছরের মেয়েটির পাশে বিশেষ করে বাদ দেখায়। মেয়েটির নাম অরেল্যে। অরেল্যে যে খুব বেশি রূপসী তা নয়, নীল চোখ, গালের উচু হাড় আর বৈচিত্র্যহীন ছিপছিপে গড়নে রূপ সৃষ্টি হয় না। তবু, ছেচল্লিশের সঙ্গে কুড়ির তফাৎ। অনেক। একটি ছেলে আছে বিলামসনের, আর্থার। অরেল্যের চেয়ে আর্থার কিছু বড়। আর্থারের তেতাল্লিশটা বিভিন্ন রকমের টাই আছে। বিলামসন সম্প্রতি সপরিবারে নগরগড়ে মহীধর রায়ের বাড়ীতে বাস করছে। বাস করছে অনেকদিন, যদিও মহীধর তাদের নিমন্ত্রণ করেছিল দিন কয়েকের জন্য। মহীধর অত্যন্ত অতিথিবৎসল, তাদের বংশে চিরদিন এই বাৎসল্যের প্রবল প্রকোপ A 8ፃ 8