পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী দেখা গিয়েছে। বিলামসন নড়বার নামও করত না, তবু মহীধর প্রত্যেক সপ্তাহেই দু’চার বার তাকে আরও কিছুদিন থেকে যাবার জন্য অনুরোধ করত। বিলামসনের সপরিবারে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলত, “অত করে বলবার দরকার নেই রায় । আমরা নিশ্চয় থাকব।” কয়েক সপ্তাহ অতিথি হয়ে বাস করবার পর বিলামসন মহীধরের ম্যানেজার হয়ে বাস করছে। সেকেলে বিশাল তিনিমহল বাড়ীটার গায়ে লাগিয়ে দক্ষিণে নদীর দিকে মহীধর যে একেলে ধাচের নতুন বাড়ীটি তুলেছে, তাতে । ਰਿਣ শোবার ঘরের সংখ্যাই হবে ডজনখানেক। অতিথি পরিবারটিকে প্রথমে মহীধর তিনখানা শোবার ঘর আর একটি বসবার ঘর ছেড়ে দিয়েছিল। তারপর বিলামসন নিজে কাজ করবার জন্য একটি অফিসঘর, আর্থারের জন্য একটি পড়ার ঘর এবং অরেল্যের জন্য একটি বসবার ঘর চেয়ে নিয়েছে। তারপর আরও একটি বাড়তি ঘর তার কি কারণে দরকার হয়েছে মহীধর ঠিক বুঝতে পারে নি। তারও পরে মহীধরের বাড়ীর এই আধুনিক অংশটির সমস্তটাই বিলামসন আয়ত্ত করে ফেলেছে। মহীধরের একটি বন্ধুর সপরিবারে আসবার কথা ছিল, নতুন বাড়ীর একাংশেই তারা থাকবে। এ বাড়ীতে পােচ সাতটি পরিবার একসঙ্গে আরামে বাস করে গেছে। মহীধরের বন্ধু পরিবার এসে পৌছবার আগে বিলামসন বলল, “আমার একটা অনুরোধ রাখতে হবে রায় । অন্য কোথাও ওদের যদি থাকবার ব্যবস্থা করে দাও, বড় ভালো হয়। ভেবো না, দেশীলোক বলে আপত্তি করছি। মোটেই তা নয়। তোমার এই বন্ধুটির সঙ্গে আমার বনে না । তা ছাড়া তোমার ও বাড়ীতে তো জায়গার অভাব নেই।” তারপর আরও অনেকবার মহীধরের আত্মীয়স্বজন বন্ধু-বান্ধব এসেছে কিন্তু বাড়ীর নতুন অংশে কেউ স্থান পায়নি। কয়েকবার বিলামসন নতুন নতুন অকাট্য যুক্তি দেখিয়ে আবদার ধরেছে তার অংশে সে যেন একলা থাকতে পায় । এখন আর বিলামসনকে যুক্তি দেখাতে হয় না, কিছু বলতেও হয় না। অতিথি যারা আসে পুরানো বাড়ীর সাতান্নটি ঘরের সব চেয়ে ভালো খান দশেক ঘরে তাদের থাকতে দেওয়া হয়, বিলামসনের শান্তি ভঙ্গ করার কথা মহীধর মনেও আনে না । জেলার কালেক্টর জ্যাকসন সাহেব যখন সন্ত্রীক তিনদিন মহীধরের অতিথি হয়েছিলেন, তখন পুরানো বাড়ীতেই তাদেরও থাকতে দেবার ব্যবস্থা হয়েছিল, বিলামসন অকাট্য যুক্তি দেখিয়ে বলল, “মিষ্টার জ্যাকসনের সঙ্গে আমার সর্বদা নানা 8 ԳՀ