পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী হয়েছে। মহীধরের বাড়ীতে ঝাড়বাতি লণ্ঠন আর টানাপাখার পাট গেছে উঠে। ত্ৰিশবছর প্রতি সন্ধ্যায় আলো জালার ভার যে লোকটির ছিল, তাকে ছাড়ানো হয় নি। পাখা টানার এগারটি ছেলেবুড়োর কাজ গেছে। বিদ্যুতের কল বসানে আর চালানোর খরচ উঠেও যাতে কিছু লাভ থাকে। সে ব্যবস্থা বিলামসন করেছে নগরগড়ের অধিবাসীদের নিজের নিজের কঁচা-পাকা বাড়ীতে বৈদ্যুতিক আলো জালাতে রাজী করানোর সমস্যাটা তাকে মোটেই কাবু করতে পারে নি। অর্ধেক লোক বুদ্ধিমানের মতো নিজেরাই রাজী হয়েছিল। কাজেই, রাজী করাতে হয়েছিল মোটে বাকী অর্ধেককে । নগরগড়ের যে বাড়ীতে সন্ধ্যার পর এক ঘণ্টার মধ্যে বাতি নিভিয়ে সকলে ঘুমিয়ে পড়ত, এখন রাত বারটা পর্যন্ত বাল্ব জালিয়ে সে বাড়ীতে সকলে জেগে থাকে । আলো জলুক বা না জালুক, টাকা মাসে মাসে দিতে হবে। আলো না জালিয়ে টাকা দেবার কথা ভাবতে অনেকের গা জ্বালা করে। তিনটে কারখানাও বিলামসন বসিয়েছে। তার মধ্যে র্কাচের কারখানাটিই সব চেয়ে বড়-স্যামুয়েল, পিটার অ্যাণ্ড ডেভিডসন কোম্পানী ম্যানেজিং এজেণ্টস। অন্তত একটা কোম্পানীর মূলধন মহীধরের দেবার ইচ্ছা ছিল। তার এষ্টেটে তার জমিতে কারখানা বসাতে বিলামসনের বন্ধুরা শুধু পকেট থেকে টাকা ঢালবে, সহায়তা করা ছাড়া সে কিছুই করবে না, এটা তার কাছে কেমন লজ্জাকর মনে হয়েছিল। কেমিকেলের কারখানার সমস্ত মূলধন, অন্তত অর্ধেক, দেবার জন্য মহীধর উৎসুক হয়ে উঠেছিল। কিন্তু যা হবার নয় তা তো আর হয় না । বিলামসন তাকে বুঝিয়ে বলল, “সত্য কথা বলি রায়, এতবড় দায়িত্ব নেবার ক্ষমতা তোমার নেই । কি দরকার তোমার অতি হাঙ্গামায় ? তোমার যথেষ্ট লাভ থাকবে । তোমার এষ্টেটের কত উন্নতি হয়েছে, আরও কত উন্নতি হবে ভাব তো !” আরও অনেক কিছু বিলামসন করেছে এবং করছে। এষ্টেটের বিলি বন্দোবস্ত আদায়পত্র হিসাবনিকাশ ইত্যাদি ব্যবস্থায় যেখানে যতটুকু টিল ছিল সব এমন অ্যাট করে দিয়েছে যে সমস্ত এষ্টেট সে টানের চোটে টন টন করছে। নিয়ম হয়েছে অসংখ্য এবং নিয়মানুবর্তিতার কড়াকড়ি হয়েছে বিস্ময়কর। দেড় আনার গোলমাল নিয়ে দেড় ডজন চিঠি লেখালেখি হয়, প্রশ্ন, কৈফিয়ৎ, মন্তব্য, ব্যাখ্যা ইত্যাদি ষ্টেটমেণ্টে দেড় দিস্তা কাগজ লাগে, দেড়দিন খেটে একজন কেরানী স্থায়ী ফাইল তৈরী করে। কারও প্ৰতি বেআইনী অন্যায় হবার উপায় নেই, আইন ছাড়া এক পা 8 ዓ 8