পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিলামসন ফেলেছে, ঘুষি মারার কৌশল শিখেছে অকাট্য। দুজনে তাকে যত না মারলী, এক সে ফিরিয়ে দিল তার দ্বিগুণ । বিলামসনদের সঙ্গে সেদিন বন্দুক ছিল না। ধূর্জটি কেঁচার খুটে নাকমুখের রক্ত মুছতে লাগল আর বিলামসনেরা নাকে রুমাল চেপে ধরে পা বাড়াল বাড়ির দিকে। বিলামসনের দুটি প্ৰকাণ্ড দুর্ধর্ষ প্ৰকৃতির কুকুর ছিল, চাকরের সঙ্গে তারা ও প্রতিদিন হাওয়া খেতে বার হত । একটু এগিয়েই কুকুর দুটির সঙ্গে বিলামসনদের দেখা হয়ে গেল ! বিলামসন চিরদিনই চটপটে । কুকুর দুটিকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে গিয়ে তাদের বঁধন খুলে একটু তফাৎ থেকে ধূর্জটির দিকে লেলিয়ে দিল। তীরের মতো ছুটে গিয়ে বাঘের মতো সেই কুকুর ধূর্জটিকে একেবারে মাটিতে পেড়ে ফেলল । বিলামসন ভেবেছিল ছোকবাটাকে একটু নাস্তানাবুদ করে কুকুর দুটিকে ডেকে নেবে। ধূর্জটি মারাত্মক রকমের নাস্তানাবুদ হল বটে, কুকুর দুটিকে বিলামসনের আর ডেকে নেওয়া হল না। এখান থেকে গোয়ালাপাড়া বেশি দূরে নয়। নদীব ওপারেই বাগদীদের এক বস্তি, অগ্রহায়ণের গোড়ায় এখন হাঁটু ডুবিয়ে হেঁটে নদী পারাপার করা চলে। চারিদিকে কাছে ও দূরে ত্রিশটি দর্শকের সমাগম বিলামসনদের সঙ্গে ধূর্জটির হাতাহাতির সময়েই হয়েছিল। এইবার তারা হৈ হৈ করে ছুটে এল। দশ বার জনের হাতে ছিল। লাঠি, লাঠির ঘায়ে বিলামসনের কুকুর দুটি দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল । কুকুর দুটিকে না মেরেও ধূর্জটিকে বােচান যেত। কুকুর অতি প্ৰভুভক্ত জীব। কিন্তু বিলামসনের কুকুর বলেই বেচারিদের সেদিন প্ৰাণটা দিতে হল। বিলামসন। কিন্তু অস্বীকার করে বলল, “ওসব মিছে কথা । ভয়ে ওরা দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল।” বিলামসনের ভাবগতিক দেখে কারো সন্দেহ রইল না যে তার কুকুরপ্রেম সত্যই বড় গভীর ছিল। কুকুরের শোকে সর্বদা মুখে সে গরীবু। গরীবু আওয়াজ করতে লাগল পাগলা কুকুরের মতো। যখন তখন যাকে তাকে সপাং সপাং বেত মারছে, কথায় কথায় পাইকপেয়াদা আমলারা বরখাস্ত হচ্ছে, জরিমানায় জরিমানায় মাইনে কেউ পাচ্ছে না। অর্ধেকের বেশি। চাপ দিয়ে দিয়ে কাবু করে লোক ঢুকিয়ে ঢুকিয়েও কারখানাগুলিতে কিছুতেই লোকের অভাব মিটছিল না, এবার 8ዓ ዓ