পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মানিক গ্ৰন্থাবলী একদিন রাত্রে খবর এল, পরদিন সকালে নিষিদ্ধ পথে পাঁচশো গরুর গাড়ী চলবে। সাধারণের রাস্তা সেটা নয়, দয়া করে যে রাস্তায় সাধারণকে পায়ে হেঁটে অথবা রবার টায়ারের গাড়ীতে যেতে দেওয়া হয়, বিলামসনের সেই পথে বিলামসনের হুকুম তুচ্ছ করে কাঠের চাকাওলা পাঁচশো গরুর গাড়ী একসঙ্গে সদরে রওনা হবে । মহীধর কাতর হয়ে বলল, “যাক না বিলামসন ? বিলামসন বলল, “ক্ষেপেছ? তাই কখনাে যেতে দেওয়া যায় ? \ মহীধর তবু ইতস্তত করছে দেখে অরেল্যে তাকে ইসারা করে নিজের । বসবার ঘরের নির্জনতায় ডেকে নিয়ে গেল । পরদিন বেলা দশটার সময় পরপর পাঁচশোখানা গরুর গাড়ী বিপুল কঁ্যাচর কঁ্যাচর আওয়াজ তুলে নগরগড় থেকে সদরে রওনা হল। বিলামসনের ব্যবস্থা আগে থেকেই করা ছিল, মাইল দুই এগিয়ে যাবার পর গাড়ীগুলি থামিয়ে প্ৰত্যেক গাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল। গাড়ী পিছু গড়পড়তা পেট্রোল খরচ হল তিন গ্যালন । আরও কম পেট্রোলেই কাজ হত। কিন্তু এসব ব্যাপারে কাপিণ্য করা বিলামসনের স্বভাব নয় । গোয়ালারা ক'দিন থেকে তাদের পুরানো ভিটেয় ছোট ছোট চালা তুলতে আরম্ভ করেছিল। বিলামসন ভেবেছিল ঘরগুলি শেষ হওয়া পৰ্যন্ত অপেক্ষা করবে। আজি আগুনের নেশা চেপে যাওয়ায় গাড়ীর পর সমাপ্ত ও অর্ধসমাপ্ত চালাগুলিতেও সে আগুন ধরিয়ে দেবার হুকুম দিল। এই বিরাট অগ্নিকাণ্ডে মানুষ মরল মোটে একজন। ধূর্জটি সামনের গরুর গাড়িটিতে ছিল। গাড়োয়ানেরা পালাবার অবসর পেল। কিন্তু ধূর্জটিকে বেঁধে রাখায় গাড়ীর সঙ্গে সেও পুড়ে ছাই হয়ে গেল। এই গাড়ীটাতে পাঁচ ছ গ্যালন পেট্রল ঢালা হয়েছিল। গাড়োয়ান ও দর্শকদের কারো কারো শরীরে একটু ছ্যাক লাগল এবং গোয়ালাদের কয়েকজনের মাথা একটু ফেটে গেল। আর কিছুই হল না। অপরাহ্নে নগরগড়ের কয়েকজন বিশিষ্ট ভদ্রলোক মহীধরের কাছে দরবার করতে গেলেন । বললেন, ‘এবার আপনি বিলামসনকে বিদায় দিন ।” মহীধর বিব্রত হয়ে বলল, “কি করে বিদায় দেব ? ‘চলে যেতে বলুন।” ད། 8bም e