পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

दिब्लग्नञ ‘যেতে বললে কি যাবে। ” কথাটা তার নিজের কানেই একটু অদ্ভুত শোনাল বৈকি! তার জমিদারী, তার বাড়ী, তার লোকজন, তার পয়সা-সে যেতে বললে বিলামসন যাবে না। একথার যেন সত্যসত্যই কোনো মানে হয় না । ভদ্রলোকেরা বললেন, ‘ওকে যেতে বলুন, আজকেই যেতে বলুন। ওর সঙ্গে আপনিও কেন মারা পড়বেন ?” মহীধর সন্ত্রস্ত হয়ে বলল, “আচ্ছা, দেখি বলে কি হয়। আপনারা অত ব্যস্ত, হবেন না, একটু সময় দিন আমাকে।” বিলামসনের বৈকালিক চা পান করছিল, মহীধর সেখানে গিয়ে চা খেতে অস্বীকার করে গম্ভীর চিন্তিত মুখে বলল, ‘এবার সত্যি সত্যি তোমার মাস ছয়েকের বিশ্রাম নেওয়া দরকার বিলামসন। তুমি কালকেই যাও। আমি এখুনি ট্যাটরা দিয়ে দিচ্ছি যে তুমি কাল থেকে ছমাসের ছুটিতে বেড়াতে যাবে।” বিলামসন শুধু বলল, “ক্ষেপেছ? এ অবস্থায় তোমাকে ফেলে কি আমি যেতে পারি। আমি গেলে কি অবস্থা দাড়াবে ভেবে দেখেছি? সবাই মারা পড়বে।” মহীধর ভীরু নয়। কেবল মনের গড়নটা তার খাপছাড়া । জীবনে কোনদিন যে কথা উচ্চারণ করতে পারবে ভাবে নি, আজি অনায়াসে বিনা দ্বিধায় সেই কথাগুলিই বলে ফেলল, “তা হোক, তোমায় আমি আর থাকতে দিতে পারি না। বিলামসন। তোমার আমার দুজনের ভালোর জন্যই তোমাকে আমায় যেতে বলতে হচ্ছে। তুমি কাল সকালে রওনা হবে। আমি এখুনি খবরটা ছড়িয়ে দিচ্ছি, শুনলে সকলে শান্ত হবে।” বিলামসন ক্রুদ্ধ হয়ে বলল, “তোমার কােণ্ডজ্ঞান লোপ পেয়েছে রায়। আমি চলে যাব শোনা মাত্র ওদের সাহস বেড়ে যাবে, উত্তেজিত হয়ে তোমার ঘরবাড়ী কাছারি আক্রমণ করবে, লুটপাট দাঙ্গাহাঙ্গামা শুরু হয়ে যাবে। আমি আছি বলেই ওরা কিছু করতে পারছে না, তা জানো ?” মহীধর আমতা আমতা করে বলল, “তা হোক। এ অবস্থায় ওসব ভয় করলে চলে না ।” অরেল্যে ক্রমাগত ইসারা করছিল, মহীধর জোর করে কার্পেটের দিকে চেয়ে রইল । বিলামসন নিজে উঠে গিয়ে আলমারি খুলে বোতল নিয়ে এল, মাসে ঢেলে মহীধরের সামনে ধরে দিয়ে বলল, “খেয়ে দ্যাখে খাসা জিনিস। তারপর এস আমরা মাথা ঠাণ্ড করে পরামর্শ করি। কর্তব্যের চেয়ে বড় কিছু নেই রায় । আদর্শের জন্য দরকার হলে প্ৰাণও দিতে হয়। ঈশ্বর যে নির্দেশ আমায় দিয়েছেন আমাকে তা মানতেই হবে।” 8b"> \οδ(ε)